শিক্ষা নিয়ে 25 টি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাংলা উক্তি

Taniya Tuha

শিক্ষা নিয়ে 25 টি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাংলা উক্তি

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যিনি বিশ্বকবি নামে পরিচিত, তাঁর শিক্ষা সম্পর্কে ভাবনাগুলি অত্যন্ত গভীর এবং প্রাসঙ্গিক। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য শুধুমাত্র বিদ্যা অর্জন নয়, বরং মানবিকতা এবং সৃজনশীলতার বিকাশও বটে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উক্তি শিক্ষার প্রকৃত অর্থ এবং তার উদ্দেশ্যকে নতুনভাবে উপলব্ধি করতে সহায়ক।

শিক্ষার উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উক্তি অনুযায়ী, “শিক্ষা এমন একটি প্রক্রিয়া, যা আমাদের অন্তর্নিহিত শক্তিকে জাগ্রত করে এবং আমাদের জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করে।” শিক্ষা শুধু তথ্য বা জ্ঞান অর্জন নয়, এটি মানুষের চরিত্র গঠন এবং সামাজিক দায়িত্ববোধ বৃদ্ধির মাধ্যমে সমাজকে উন্নত করতে সহায়ক।

“শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল মানুষের মানসিকতা ও নৈতিকতার উন্নতি ঘটানো।” – এই উক্তি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে শিক্ষা কেবলমাত্র বুদ্ধিবৃত্তিক নয়, বরং নৈতিক ও মানবিক গুণাবলী বৃদ্ধির মাধ্যমে সমাজে সঠিক ভূমিকা পালন করতে শেখায়।


চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির, জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর আপন প্রাঙ্গণতলে দিবস শর্বরীব সুধারে রাখে নাই খন্ড ক্ষুদ্র করি।

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

নিজের গুণহীনতার বিষয়ে অনভিজ্ঞ এমন নির্গুণ শতকরা নিরেনব্বই জন, কিন্তু নিজের গুণ একেবারে জানে না এমন গুণী কোথায়?

- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

কাব্যরস আস্বাদনে পাঠকদের অত্যন্ত বেশি যত্নে পথ দেখিয়ে চলা স্বাস্থ্যকর নহে। নিজে নিজে সন্ধান করা ও আবিষ্কার করা সত্যকার আনন্দ।


– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

নবসৃষ্টির যত দোষ যত ত্রুটিই থাকুক-না কেন, মুক্তি কেবল ঐ কাঁটাপথেই। বাঁধা সড়ক গোলাপদলের পাপড়ি দিয়ে মোড়া হলেও সে পথ আমাদের পৌঁছিয়ে দেবে শেষটায় চোরা গলিতেই।

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


যখন তুমি সত্য কথা বলবার জন্য নিন্দা কর না, কেবল নিন্দা করবার জন্য সত্য কথা বল, তখন তোমার সে সত্য কথা নীতির বাজারে মিথ্যা কথার সমান দরেই প্রায় বিক্রি হবে।


– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

যুক্তির একটা ব্যাকরণ আছে, অভিধান আছে, কিন্তু আমাদের রুচির অর্থাৎ সৌন্দর্যজ্ঞানের আজ পর্য্যন্ত একটা ব্যাকরণ তৈয়ারি হইল না। তাহার প্রধান কারণ, সে আমাদের হৃদয়ের মধ্যে নির্ভয়ে বাস করিয়া থাকে


– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

চিরকাল কোন্‌ জিনসটা থাকবে না – থাকবে তা কেউ বলতে পারে না এবং আমিও সে সমন্ধে কোনোরকম তর্কবিতর্ক করতে চাই নে – নিজের মনের ভিতরে যখন একটা সফলতার আনন্দ অনুভব করা যায় সেইটেই লেখকের পক্ষে যথার্ত অমরতা। দুর্ভাগ্যক্রমে সে আনন্দ খুব ভালো লেখক থেকে খুব খারাপ লেখক পর্য


– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

সামনে একটা পাথর পড়লে যে লোক ঘুরে না গিয়ে সেটা ডিঙ্গিয়ে পথ সংক্ষেপ করতে চায় – বিলম্ব তারই অদৃষ্টে আছে।” কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাণী

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

অপর ব্যাক্তির কোলে পিঠে চড়িয়া অগ্রসর হওয়ার কোন মাহাত্ম্য নাই – কারণ চলিবার শক্তিলাভই যথার্থ লাভ, অগ্রসর হওয়া মাত্র লাভ নহে।

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আমার মৃত্যুকালে তোমাকে যে কথাটা বলিব মনে করিয়াছিলাম, আজ তাহা বলিতে ইচ্ছা করিতেছে। আজ মনে হইতেছে, তুমি আমাকে যত শাস্তি দাও না কেন আমি বহন করিতে পারিব।

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


প্রেমের দুই বিরুদ্ধ পার আছে। এক পারে চোরাবালি, আর-এক পারে ফসলের খেত। এক পারে ভালোলাগার দৌরাত্ম, অন্য পারে ভালোবাসার আমন্ত্রণ।

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভালোবাসার ট্রাজেডি ঘটে সেইখানেই যেখানে পরস্পরকে স্বতন্ত্র জেনে মানুষ সন্তুষ্ট থাকতে পারে নি, নিজের ইচ্ছেকে অন্যের ইচ্ছে করবার জন্যে যেখানে জুলুম, যেখানে মনে করি আপন মনের মতো করে বদলিয়ে অন্যকে সৃষ্টি করব।

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

সত্যকার আদর্শ লোক সংসারে পাওয়া দুঃসাধ্য। ভালবাসার একটি মহান্‌ গুণ এই যে, সে প্রত্যেককে নিদেন এক জনের নিকটেও আদর্শ করিয়া তুলে।


– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

একটা মন আর একটা মনকে খুজিতেছে নিজের ভাবনার ভার নামাইয়া দিবার জন্য, নিজের মনের ভাবকে অণ্যের মনে ভাবিত করিবার জন্য।

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দূরত্ব কোনটি জানো? নাহ, জীবন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত, উত্তরটা সঠিক নয়। সবচেয়ে বড় দূরত্ব হলো যখন আমি তোমার সামনে থাকি, কিন্তু তুমি জানো না যে আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি।


– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

মনে যখন একটা প্রবল আনন্দ একটা বৃহৎ প্রেমের সঞ্চার হয় তখন মানুষ মনে করে, ‘আমি সব পারি’। তখন হঠাৎ আত্মবিসর্জনের ইচ্ছা বলবতী হইয়া ওঠে।

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

চোখ কতটুকুই দেখে কান কতটুকুই শোনো স্পর্শ কতটুকুই বোধ করে। কিন্তু মন এই আপন ক্ষুদ্রতাকে কেবলই ছড়িয়ে যাচ্ছে।

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ক্ষুদ্রকে লইয়াই বৃহৎ, সীমাকে লইয়াই অসীম, প্রেমকে লইয়াই মুক্তি। প্রেমের আলো যখনই পাই তখনই যেখানে চোখ মেলি সেখানেই দেখি, সীমার মধ্যে সীমা নাই।

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

নারীর প্রেম পুরুষকে পূর্ণশক্তিতে জাগ্রত করতে পারে; কিন্তু সে প্রেম যদি শুক্লপক্ষের না হয়ে কৃষ্ণপক্ষের হয় তবে তার মালিন্যের আর তুলনা নেই।

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

স্বামীরা প্রেমিক হতে অবশ্যই রাজি, তবে সেটা নিজের স্ত্রীর সাথে নয়। নিজের স্ত্রীর প্রেমিক হবার বিষয়টা কেন যেন তারা ভাবতেই চায় না।

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

পৃথিবীতে বালিকার প্রথম প্রেমেরমত সর্বগ্রাসী প্রেম আর কিছুই নাই। প্রথম যৌবনে বালিকা যাকে ভালোবাসে তাহার মত সৌভাগ্যবানও আর কেহই নাই। যদিও সে প্রেম অধিকাংশ সময় অপ্রকাশিত থেকে যায়, কিন্তু সে প্রেমের আগুন সব বালিকাকে সারাজীবন পোড়ায়।

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

পুরুষের বুদ্ধি খড়গের মতো; শান বেশি না দিলেও কেবল ভারেই অনেক কাজ করতে পারে। মেয়েদের বুদ্ধি কলম – কাটা ছুরির মতো; যতই ধার দাওনা কেনো, তাতে বৃহৎ কাজ চলে না।

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
গ্রামের-সেই-পিচ্চি-মেয়ে-অনেক-সুন্দর-একটি-গল্প

সংসারে প্রতিদিন আমরা যে সত্যকে স্বার্থের বিক্ষিপ্ততায় ভুলিয়া থাকি উৎসবের বিশেষ দিনে সেই অখণ্ড সত্যকে স্বীকার করিবার দিন – এইজন্য উৎসবের মধ্যে মিলন চাই। একলার উৎসব হইলে চলে না।

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রমণী অনর্থক হাসে, তাহা দেখিয়া অনেক পুরুষ অনর্থক কাঁদে, অনেক পুরুষ ছন্দ মিলাইতে বসে, অনেক পুরুষ গলায় দড়ি দিয়ে মরে।

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

সাধারণত স্ত্রীজাতি কাঁচা আম, ঝাল লঙ্কা এবং কড়া স্বামীই ভালোবাসে। যে দুর্ভাগ্য পুরুষ নিজের স্ত্রীর ভালোবাসা হইতে বঞ্চিত সে যে কুশ্রী অথবা নির্ধন তাহা নহে; সে নিতান্ত নিরীহ।

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

শিক্ষার পদ্ধতি

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বাস করতেন যে শিক্ষার পদ্ধতি হওয়া উচিত স্বাধীন এবং মুক্ত চিন্তার উপযোগী। তাঁর মতে, “শিক্ষা এমন হওয়া উচিত যা ছাত্রদের স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে এবং সৃজনশীল হতে উৎসাহিত করে।”

শিক্ষার মাধ্যমে সৃজনশীলতা ও মানবিকতার বিকাশ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে, “সৃজনশীলতা শিক্ষার একটি অপরিহার্য অংশ।” তিনি বলেছিলেন, “শিক্ষার মাধ্যমে আমাদের সৃজনশীলতাকে জাগ্রত করতে হবে এবং মানবিক গুণাবলীকে বিকশিত করতে হবে।”

তিনি আরো বলেছিলেন, “শিক্ষা এমন হওয়া উচিত যা আমাদের চিন্তা ও অনুভবের জগতে নতুন আলো জ্বালাতে সাহায্য করে।” এই উক্তি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে শিক্ষার মাধ্যমে আমরা নতুন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তার বিকাশ করতে পারি, যা আমাদের জীবনে উন্নতি ও সফলতা আনতে সাহায্য করে।

শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উক্তি অনুযায়ী, “শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো মানুষের আত্মার মুক্তি।” তিনি বিশ্বাস করতেন যে শিক্ষা মানুষের মন ও মস্তিষ্ককে মুক্ত করতে এবং তাকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তার জগতে নিয়ে যেতে সহায়ক।

“শিক্ষা এমন হওয়া উচিত যা আমাদের সমাজকে উন্নতির দিকে নিয়ে যায়।” – এই উক্তি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে শিক্ষার মাধ্যমে আমাদের সমাজকে উন্নত করতে এবং মানুষের জীবনের মান উন্নত করতে সাহায্য করতে হবে।

Leave a comment