সাধারণ বউ জীবনের গোপন হিরোইন প্রেমের সুন্দর গল্প

akhi akter

সাধারণ বউ জীবনের গোপন হিরোইন প্রেমের সুন্দর গল্প

মেহুর সাথে মেঘের বিয়েটা হয়ে যায়।মেঘের মা মেহুকে ধরে ঘরে নিয়ে আসেন।তারপর বোরকা খুলিয়ে একটা চেয়ারে মেহুকে বসায়।

আর বলে–“আজ থেকে আমাকে নিজের মায়ের মতো ভাববে।আমি ও তোমাকে বউ হিসেবে নয় মেয়ের মতো ই স্নেহ করবো।তোমার সুবিধা অসুবিধা কষ্টের কথা আমার সাথে শেয়ার করবে তোমার মাকে যেভাবে করতে সেভাবে।

মেহু ছলছল চোখে মাথা নাড়ায়।মেঘতা এতক্ষন মেঘের বাবার কোলে ছিলো।এইরকম শান্ত আদুরে বাচ্চা পেয়ে মেঘের বাবা খুব খুশি হন।

তারপর মেঘতা কে কোলে নেয় মেঘের মা।মেঘতা ও দাদুকে জড়িয়ে নেয়।

মেঘের বাবা একমাত্র ছেলে ছিলেন।তাই পরিবারের আর কেউ নেই।

যদিও আশেপাশের মানুষ বলাবলি করছে একমাত্র ছেলে শেষমেশ বিবাহিত মেয়ে বিয়ে করেছে,সাথে বাচ্চা ও আছে।

মেঘের বাবা প্রতিবেশিদের এসব কথার গুরুত্ব তেমন দেন না।তিনি মানুষের চরিত্রের উপর বিশ্বাস রাখেন আর মর্যাদা দেন।মেহু ভালো মেয়ে,ছেলের বউ হওয়ার জন্য মেহু ই পারফেক্ট।

মেহু তখন এদিক সেদিক পানির গ্লাস খুঁজার চেষ্টা করছে।মেঘতার ও হয়ত পানির পিপাসা লেগেছে।এদিক সেদিক তাকাতেই মেঘের মা প্রশ্ন করে।

–“কিছু কি খুজছো?
মেহু তখন বলে–“আম্মু পানি খুজছিলাম।
মেঘতা তখন বলে–“মাম্মাম আমি পানি পান করবো?

মেঘের মা এদের কান্ড দেখে হাসে।
–“আচ্ছা আমি পানি নিয়ে আসি।

মেঘতা মায়ের কোলে বসে থাকে।মেঘের মা কিছুক্ষণ পর ফিরে আসে।সাথে রাতের খাবার সহ।মেহুর চোখে বিস্ময়।বাড়ির বউয়ের এতকিছু খেয়াল রাখছে এরা?সত্যি মেঘতার এখন খাওয়ার সময়।যদিও নতুন বাড়ি এসেছে বলে মুখ ফুটে বলতে পারেনি।কিন্তু মেঘের মা ও একজন মা তিনি তাই না বলতেই বুঝে গেলেন।

মেঘের মা বলে–“মা মেয়ে চট করে খাবার গুলো শেষ করো দেখি?

মেহু তখন বলে–“আমি পরে আপনাদের সাথে খাব।মেঘতা কে খাইয়ে দিই!

মেঘের মা তাড়া দিয়ে বলে–“আমরা ও বসে যাব তো!
.
.
খাওয়া দাওয়া শেষে মেহুকে মেঘের রুমে দিয়ে আসে।

বিয়ের প্রথম রাত মেহুর খুব ভয় হতে লাগলো।মেঘ মানুষ টা কেমন হবে?সারাজিবন যে মানুষটার সাথে থাকতে হবে।

মেহু বিছানায় এক পাশেই মেঘতাকে ঘুম পাড়িয়ে দিলো।মেঘ রুমে ডুকতেই মেহু সালাম দিলো।

মেঘ মুচকি হেসে মেহুকে জড়িয়ে ধরলো।তারপর বলে–এই রাত নিয়ে আমার কত স্বপ্ন ছিল তাহু,তাইনা?
মেহু ভ্রু কুচকে বলে উঠলো।

সাধারণ বউ জীবনের গোপন হিরোইন প্রেমের সুন্দর গল্প

–“আমি মেহু!
মেঘ মেহুকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়,আর হেসে বলে–“জানিতো তুমি অভিনয় করে নাম ও পালটে পেলেছো।আসলে তুমি তাহু ই?

মেহু তখন যে কথাটা বলল মেঘ সেটা শুনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না।

–“তাহু তো আমার আপুর নাম।আমরা জমজ বোন ছিলাম।
মেঘ অবাক হলো।

–“কই তাহু তো কখনো আমাকে বলেনি?
–“জানিনা কেন বলেনি।তবে আপু হয়ত আপনাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল।যদিও আপনার সম্পর্কে আপু আমাকে ও কিছুই বলেনি।

মেঘ মন খারাপ করে বলে-
–“তাহলে এখন তাহু কোথায়?

মেহু তখন মন খারাপ করে বলে–“দুলাভাইয়ের সাথে…
মেঘ আর কিছুই শুনলো না,শুনার ও প্রয়োজন মনে করেনি।দ্রুত পায়ে মেহুর সামনে থেকে সরে গেলো।আর ব্যালকনির দিকে পা বাড়ালো।তার বউ তাহু নয়।তাহুর বোন!এই বউকে কিভাবে সে মেনে নিবে?যেখানে সে তাহু কেই ভালবাসতো!

মেহু তখন বিছানার একপাশে বসে কেঁদে উঠলো।এজন্য মেঘ বারবার তার সাথে এমন বিহেভ করেছে।তখনি যদি এ কথাটা খোলাসা করে জানার চেষ্টা করতো আজ এতবড় ভুল হতো না।বিয়ের প্রথম রাত এভাবে কান্না দিয়ে শুরু।সংসার জিবন কেমন যাবে?আর মেহুকে মেঘ মেনে নিবে তো?
.
মেঘ আবারো ব্যালকনি থেকে ফিরে এসে ডায়ার থেকে সিগারেটের প্যাকেট টা নিয়ে ব্যালকনির চেয়ারে বসে পড়লো।অতিরিক্ত চিন্তায় সে সিগারেট খায়।তাহুর সাথে শেষদেখার পর থেকে মেঘের এ অভ্যাস হয়েছে। তবে সবসময় খায়না।

মেহু মেঘতার কপালে চুমু দিয়ে শাড়ি পাল্টাতে যায়।শাড়ি পালটে এসে মেঘতার পাশে বসে মায়ের কথা মনে পড়ে।ধর্য্য ধরতে বলেছিলো।কিভাবে কি হবে?এখন তো সে বউ হয়ে গেছে চাইলেই এ সম্পর্ক অস্বীকার করা যাবে না যে।আপুকে খুব মনে পড়ছে তার।

এদিকে মেঘ একের পর এক সিগারেট খেয়ে ই যাচ্ছে।তারপর মাথা চেপে বসে পড়লো।চোখে নোনা জল,আর ডুব দিলো অতীতে।কিভাবে তাহুর সাথে পরিচয়, কিভাবে কি হলো?

(অতীত)
সকালবেলা…
ফ্রেশ হাওয়ার পর মেঘ ব্যালকনিতে বসে আছে।সাথে এককাপ চা আর গিটার।প্রতি সকালের অভ্যাস মাত্র।মেঘেরা ভাড়া বাড়িতেই থাকে।মেঘের বাবা একজন সামান্য বেতনের চাকুরীজিবি।তবে তারা সুখী পরিবার।

মেঘ অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে।মেঘেদের বাসার সামনে ই বিশ্ববিদ্যালয়,হেটে গেলে পাচ মিনিট লাগে।বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী এদিক দিয়েই যায়।
.
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মেঘ গিটারে সুর তুলে..
সেই কবেকার ভায়োলিন
বেজে যায় কতদিন
প্রাণে চাপা ঢেউ
দেখেনি আর কেউ
কখনো অভিমান, অবাধ্য পিছুটান.

জানি না কী কষ্টে এই অবেলায়
তবুও নির্বাসন বাসর সাজিয়ে
ঠোঁটে চেপে ধরা থাক ভালোবাসায়।

ঘুণে খাওয়া মেঘে কালো হয়ে যায় এ হৃদয় যখন
একা একা শুধু অকারণেই ঝরে বৃষ্টি এমন
আজও তাই,অবাক রঙে এঁকে যাই
সাদা কালো রঙ মাখা ফানুসের মুহূর্ত রাঙাই
ভীষণ কালো মেঘ পুড়ে ছাই আবেগে আজও তাই।

অবাক জোছনায় পোড়া চোখ তবুও সাজাই
এই সন্ধ্যায় দু’চোখ সাগরে
বুকের পাঁজরে ভেসে যায়
অবাক জোছনায় লুকিয়ে রেখেছি
ভেজা চোখ দেখাইনি তোমায়।

গানটি গাওয়া শেষ হতেই রাস্তায় একটি মেয়েকে দেখে মেঘের চোখ আটকে যায়।কখনো মেয়েদের সেভাবে খেয়াল করা হয়নি কখনো।
.
.
তাহরীমা!নামটা বেশ বড় বড় লাগে বলে ছোট করে তাহু বলে ই অনেকে ডাকে।বোরকা পড়ে স্কার্ফ করেই সে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছে।মেঘেদের বাসার সামনে আসতে টুস করে জুতাটা ছিঁড়ে যায়।তাহু অসহায় চোখে জুতার দিকে চেয়ে আছে।আর সময় পেলো না জুতা ছিঁড়ার।কোচিং এ এমনিতেই লেইট।

তাহু ভাবছে জুতা হাতে নিবে নাকি খালি পায়েই হেটে যাবে গা।কি করবে?

রাস্তার মাঝে মেয়েটা এভাবে দাঁড়িয়ে আছে কেন?মেঘ ব্যালকনির গ্রীলের ফাকে চেয়ে থাকলো।

তাহু আশেপাশে চোখ বুলালো কেউ তাকে দেখছে কিনা?কিন্তু না তেমন কেউ নেই।তাহু ছিঁড়া জুতা হাতে নিলো।তারপর একপাশে দাঁড়িয়ে হিজাব থেকে একটা পিন বের করলো।তারপর খুব কষ্টে জুতার ফিতায় ডুকিয়ে আটকে দিলো।তারপর সস্থি নিয়ে জুতাটা পড়ে হাটা দিলো।

মেঘ মুগ্ধ নয়নে তাহুকে চেয়ে আছে।উপস্থিত বুদ্ধি যে কারোর থাকে না।মেয়েটার তো বেশ বুদ্ধি।মেঘ হাসলো।

তাহু কোচিং করে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস আছে।তাহুদের বাসা এখান থেকে অনেক দূর হওয়ায় সকাল সকাল বের হতে হয়।

ক্লাস শেষে বের হতেই মেঘ ও একই সাথে বের হয়।তাহুদের পাশের ক্লাস ই মেঘেদের ক্লাস।একসাথেই ছুটি হয় সবার।

তাহুকে দেখেই মেঘ চিনতে পারে।মেঘ পায়ের উপর চেয়ে থাকতেই তাহু সেটা খেয়াল করে বোরকা দিয়ে পা ডাকার চেষ্টা করতেই,

মেঘ আস্তে করে বলে–“জুতা টা ছিঁড়ে ছিল,আমি দেখেছি।

তাহু অসহায় চোখে ঠোট উল্টিয়ে চেয়ে থাকে।মেঘ তখন বলে–“চিন্তা নেই আমি কাউকেই বলবো না।নাম কি?

তাহু বলে–“তাহরীমা
–“অ বাবা কি নাম রেহহহ!
তাহু কিছুই না বলে চুপ করে থাকে।

–“ছোট করে কি ডাকা যায়?
তাহু মাথা নেড়ে বলে–“আমাকে অনেকে অনেক ভাবে ডাকে,চাইলেই ডাকতে পারেন।তাহু,তারু,রিম,জিম।
তাহু আঙ্গুল গুণে গুণে মেঘ কে দেখায়।
–“ওকে তাহু ই বলবো।

–“কোন ইয়ার?
–“ফাস্ট ইয়ার!
–“ওকে যাও।
তাহু কিছুই না বলে চলে যায়।আচ্ছা মেয়ে তো হ্যা বা না কিছুই বলল না।যেতে বললাম চলে গেলো?

এই মেঘ কে এভোয়েড করা।বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাইকে চিনেনা যে।হাজার হলেও আমি একবছর তার সিনিয়র।
মেঘ আবার মুচকি হাসে।পাগল হয়ে গেছে নাকি সে?

তাহু আস্তাগফিরুল্লাহ বলে বলে বুকে ফু দেয়।ছেলেদের সাথে কথা সে তেমন বলে না এভাবে হুট করে এসে কথা বলবে সে কল্পনা ই করেনি।
.
সামনে পরীক্ষা তাহুকে রেগুলার ক্লাস কোচিং একসাথে করতে হচ্ছে।মেঘ তাহু দুজনেই এক ডিপার্টমেন্ট এর।

মেঘ প্রতিদিন ব্যালকনিতে তাহুকে দেখার জন্য বসে থাকে।ভালই লাগে কেন লাগে অজানা।জানার ইচ্ছে ও নেই।
এরকম দূর থেকে দেখতে পারাটায় সে নিজেকে সৌভাগ্য মনে করছে।কেন মনে করছে তাও অজানা।
শুধু জানে ভাল লাগে।ভীষণ ভাল লাগে মেয়েটাকে দেখতে।এ ভাল লাগার কথা কি তাহু কখনো জানবে?
.
.
আজ পরীক্ষা।
পরীক্ষার হলে এক সীটে দুজন করে বসানো হয়েছে।একজন ছেলে একজন মেয়ে সিনিয়র জুনিয়র মিলে মিশে সীট।প্রথম পরীক্ষা তো তাই মেঘ আগে থেকেই এসে গেছে।

যদিও ওয়ান নাইট প্রিপারেশন তার।মানে সারাজিবন বই খুলে দেখেনা।পরীক্ষার আগের রাতে সব পড়া পড়ে ই আসে।তবুও মেঘ ভাল রেজাল্ট করে।

তাহুকে একই হলে ডুকতে দেখে মেঘ অবাক হয়।তাহু নিজের রোল মিলিয়ে সীট খুঁজে কিন্তু খুঁজে পায়না।সীট খুঁজতে খুঁজতে একপর্যায়ে মেঘের পাশের সীট দেখে থামে।এইতো তার রোল নাম্বার।সে সীটে বসতেই মেঘকে খেয়াল করে মুহুর্তেই হাসিমুখ উধাও।

মেঘ হাসিমুখ গিফট করে বলে–“ওয়াও,আমার পাশে ই তাহু?
তাহু ভ্রু কুঁচকে অন্য পাশে তাকায়।তাহুর বেস্ট ফ্রেন্ড গুলা তাহুর অন্য পাশে।প্রশ্ন দেয়া হলেই পিছনের এক ফ্রেন্ড তাহুকে ডাক দেয়।

–“তারু রে কলম দুইটা পাওয়া যাবে?
তাহু পিছনে তাকাতেই ফ্রেন্ড কলম দেয়ার জন্য ইশারা করে।তাহু দুইটা কলম নিয়ে আসে পরীক্ষায়।কারণ কখন কলমে ডিস্টার্ব দেয় ঠিক নেই।তাছাড়া প্রতি পরীক্ষায় ফ্রেন্ডরা তার থেকে ই কলম খুঁজে। তার কলম দিয়েই লিখে।তাহু কিছুই বলেনা। পিছনে ফিরে কলম দেয়া শেষে স্যারের চোখে পড়ে।

তাহু ক্লাসে পড়ালেখায় ভালো হওয়ায় স্যারেরা চিনে।ফলে স্যার ডাক দেয়–“তারু দাড়াও?
তাহু ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে যায়।
–“দাঁড়িয়ে থাকো।পিছনে ফিরে কি করছিলে?
তাহু তখন কাদো মুখ নিয়ে বলে–“আমি ফ্রেন্ড কে কলম দিচ্ছিলাম।

–“প্রতিদিন ই তুমি ফ্রেন্ড কে কলম দাও?মিথ্যা বলো?
তাহু মাথা নিচু করে রাখে।তখন ফ্রেন্ড উঠে দাঁড়িয়ে বলে–“সত্যি স্যার তারু আমাকে কলম দিয়েছিল।আমার কলম ধরছে না তাই।

তখন মেঘ দাঁড়িয়ে বলে–“এ ঘটনার আমি সাক্ষী স্যার।দয়া করে ক্ষমা করে দিন?
স্যার মেঘের দিকে তাকিয়েই বলে–“নেক্সট এসব আর ক্ষমা করব না।

তাহু মাথা নিচু করে রাখে।এরকম দাঁড়ানো টা কতটা অপমান জনক লাগে তার কাছে।এক ফোটা জল সাদা কাগজের উপর পরে।
যেই জল মেঘের চোখ এড়ায় না।মেয়েটা হাসলেও সুন্দর কাঁদলে ও সুন্দর।মাশাআল্লাহ….

Leave a comment