যারা শাওয়ালের ৬ রোজা রাখতে চান, তাদের উদ্দেশে এখানে ৩টি বিষয়ে আলোচনা করবো: শাওয়ালের ৬ রোজা নাকি কাজা রোজা—কোনটি আগে রাখতে হবে? রোজাগুলো বিরতিহীন রাখা কি জরুরি? শাওয়ালের ৬ রোজায় কীভাবে ১ বছরের নেকি হয়?
▬▬▬▬▬▬▬▬❖▬▬▬▬▬▬▬▬
➤ যদি কেউ সারা বছর রোজার ফজিলত অর্জন করতে চায়, তবে প্রথমেই তাকে রামাদানের কাজা রোজাগুলো রাখতে হবে, এরপর শাওয়ালের ৬ টি রোজা রাখবে। কারণ হাদিসে বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি রামাদানের রোজা রাখলো, অতঃপর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখলো, সে যেন সারা বছর রোজা রাখলো।” [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ২৬৪৮]
.
এটি হাম্বলি মাযহাব এবং আলিমগণের একটি অংশের অভিমত।
.
তাঁদের মতে, হাদিসটিতে বলা হয়েছে—প্রথমে রামাদানের রোজা রাখা, অতঃপর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখা। সুতরাং, আগে রামাদানের রোজা পূর্ণ করতে হবে, এরপর শাওয়ালের রোজা রাখতে হবে। তাহলেই হাদিসে বর্ণিত প্রতিদান পাওয়া যাবে। তাছাড়া কাজা আদায় করা ফরজ, পক্ষান্তরে শাওয়ালের ৬ টি রোজা নফল। সুতরাং, নফলের উপর ফরজকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
.
এই মতাবলম্বীদের একটি মত হলো, যদি এক রামাদানে কারো এত পরিমাণ কাজা হয়ে থাকে যে, সেগুলোর সবকটি রাখলে শাওয়াল মাসই শেষ হয়ে যাবে, তাহলে তারা প্রথমে শাওয়াল মাসে কাজা রোজাগুলো সমাপ্ত করবেন এবং পরবর্তী (জিলকদ) মাসে শাওয়ালের ৬টি রোজা রাখবেন। যেহেতু তিনি অপারগ, তাই তার জন্য এই ছাড়।
.
➤ হানাফি, শাফিয়ি ও মালিকি মাযহাব তথা অধিকাংশ আলিমের মতে, কেউ চাইলে আগে শাওয়ালের রোজা রাখতে পারবে, এরপর সময়-সুযোগ বুঝে কাজা রোজাগুলো রাখবে। এমনটি করা মাকরুহ হবে না। তাঁরা উপরের হাদিসটির ব্যাপারে বলেন, এই হাদিসটিতে সুস্পষ্টভাবে এটা বলা হয়নি যে, ‘আগে কাজা রোজাই রাখতে হবে’ বরং এটি উত্তম-অনুত্তমের ব্যাপার। আগে কাজা রেখে এরপর শাওয়ালের রোজা রাখা উত্তম, তবে আবশ্যক নয়। তাঁরা আরেকটি দলিল দেন এক্ষেত্রে; তা হলো: সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে এসেছে, আয়িশা (রা.) রামাদানের কাজা রোজা শাবান মাসে রাখতেন। [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ১৯৫০]
.
তাহলে, আয়িশা (রা.) রামাদানের কাজা রোজা শাবান মাসে রাখলে, শাওয়াল মাসের ৬টি রোজা কি রাখতেন না? তাঁর মতো মহীয়সী নারী শাওয়ালের নফল রোজা মিস করতেন, এমন ধারণা রাখা যায় না। আর শাওয়ালে তিনি যেহেতু কাজা রোজাগুলো রাখতেন না, বরং আরও ১০ মাস পর শাবান মাসে (অর্থাৎ আরেক রামাদানের আগের মাসে) রাখতেন, সেহেতু এটাই প্রমাণিত হয় যে, কাজা রোজা না রেখেও শাওয়ালের নফল রোজা রাখা যাবে।
.
✿ সিদ্ধান্ত: প্রথম কথা হলো, আগে কাজা রোজা রাখা উত্তম, এই কথা সকল যুগের সকল আলিমের মত। তবে, কাজাগুলো রাখার আগে শাওয়ালের রোজা রাখা যাবে কি না তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। যাদের পক্ষে সম্ভব, তারা যথাসম্ভব আগে কাজা রোজা রেখে এরপর শাওয়ালের রোজা রাখুন। আর যাদের জন্য এটা কঠিন হয়ে যাবে, তারা চাইলে আগে শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখতে পারেন, এরপর কাজা রোজা রাখবেন। যেহেতু আয়িশা (রা.)-এর আমল ছিলো: তিনি কাজা রোজা শাবান মাসে রাখতেন, তাহলে অনুমান করা যায়, তিনি শাওয়ালের ৬টি রোজা রাখতেন কাজা রোজাগুলো আদায় করার আগেই। আমরা বলবো, সম্ভব হলে আগে কাজা রোজা ও পরে শাওয়ালের রোজা রাখুন, এটি উত্তম, তবে, এটি বাধ্যতামূলক নয়।
.
➤ শাওয়ালেন ৬টি রোজা বিরতিহীন রাখা যাবে আবার মাঝখানে গ্যাপ দিয়ে দিয়েও রাখা যাবে। এতে কোনো অসুবিধা নেই। মোটকথা, শাওয়াল মাসের মধ্যে রাখলেই হলো।
.
আল্লাহ বলেন, “আর, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অসুস্থ থাকবে অথবা সফরে থাকবে, সে অন্য দিনগুলোতে এই গণনা পূর্ণ করবে (কাজা করবে)।” [সুরা বাকারাহ, আয়াত: ১৮৫]
.
আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা কাজা পালনের ক্ষেত্রে বিরতিহীন রোজা রাখার শর্ত আরোপ করেননি। সুতরাং এতে প্রশস্ততা রয়েছে। [ইমাম নববি, আল-মাজমু’: ৬/১৬৭; ইমাম ইবনু কুদামাহ, আল মুগনি: ৪/৪০৮; শায়খ ইবনু বায, মাজমু‘উ ফাতাওয়া: ১৫/৩৫]
.
➤ শাওয়ালের ৬টি রোজা রাখা দ্বারা কীভাবে এক বছরের রোজা রাখার সমান সওয়াব হয়?
.
এর উত্তরে প্রথমেই আমাদের একটি সুত্র মনে রাখতে হবে, যেটি কুরআনে এসেছে—
.
مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا
.
অর্থাৎ, যে ব্যক্তি একটি নেক আমল নিয়ে আসবে, তার জন্য থাকবে অনুরূপ দশ (গুণ প্রতিদান)। [সুরা আন‘আম, আয়াত: ১৬০]
.
তাহলে রামাদানের ৩০ রোজা এবং শাওয়ালের ৬ রোজা (৩০+৬)= ৩৬ টি রোজা। যেহেতু প্রতিটি নেক আমল ১০ গুণ বাড়বে, সেহেতু (৩৬×১০) = ৩৬০ দিনের রোজা তথা এক চন্দ্রবছর।
.
সহিহ ইবনে খুযাইমার হাদিসে এসেছে, “রামাদান মাসের রোজা দশ মাসের সমান (এক মাস সমান দশ মাস) আর ছয় দিনের রোজা দুই মাসের সমান (৬×১০=৬০)। এভাবে এক বছরের রোজা হয়ে যায়।”
.
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Nusus
.
Thank you for your sharing. I am worried that I lack creative ideas. It is your article that makes me full of hope. Thank you. But, I have a question, can you help me?