ছাত্র বিপ্লব – বাংলাদেশের আন্দোলন 2024

Paramita Bej

বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন 2024: একটি সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষ


২০২৪ সালে বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন ছিল এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। student protest শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার এবং সাম্যের জন্য একটি দৃঢ় অবস্থান নিয়ে এসেছিল। আন্দোলনের মূল কারণ ছিল সরকারি চাকরির কোটা ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। ২০১৮ সালে এই কোটা ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছিল, কিন্তু ২০২৪ সালে তা পুনরায় চালু করা হয়।

এই আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাহবাগ পর্যন্ত মিছিল করে এবং শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলো অবরোধ করে। তারা দাবি করেছিল, student protest মাধ্যমে তারা তাদের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে চায়। আন্দোলনকারীরা চেয়েছিল যে, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হোক এবং সকলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা হোক।

শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ থেকে আন্দোলনে যোগ দেয় এবং তাদের দাবির প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানায়। student protest এর ফলে সারাদেশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি নতুন চেতনা এবং সামাজিক দায়িত্ববোধের উদ্ভব ঘটে। আন্দোলনের ফলে সরকার কিছুটা হলেও শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়।

২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে। student protest এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা দেখিয়ে দিয়েছে যে, তারা নিজেদের অধিকার এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য সর্বদা প্রস্তুত।

বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলন সবসময়ই একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক এবং রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করে আসছে। student protest এর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এটি শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের অধিকার এবং সুযোগ-সুবিধার জন্য নয়, বরং দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত, বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ সবসময়ই পরিবর্তনের প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। বর্তমানেও বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীরা ন্যায়বিচার এবং সামাজিক সমতার দাবিতে রাস্তায় নামছেন। student protest এর ধারাবাহিকতা ও প্রভাব আজও সমাজে গভীরভাবে প্রোথিত।

গত কয়েক বছরে, বিশেষ করে ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, ছাত্রদের অবদমনের বিরুদ্ধে তাদের শক্তিশালী কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ওই সময়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমে আসে এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে সোচ্চার হয়। তাদের student protest শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও আলোচিত হয়।

ছাত্র আন্দোলনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতামত প্রকাশের সুযোগ পায় এবং রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। student protest শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি নতুন চিন্তার সঞ্চার করে এবং তাদের মধ্যে সামাজিক দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তোলে।

বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের আরেকটি প্রভাবশালী দিক হলো, এটি বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের সূত্রপাত ঘটায়। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, যা পরবর্তীতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি রচনা করে। সেই সময়েও ছাত্ররা তাদের student protest এর মাধ্যমে সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেছিল।

ছাত্র আন্দোলনের সফলতার পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো, এর নেতৃত্ব প্রায়ই উদ্যমী এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছাত্র নেতাদের হাতে থাকে। তারা শুধু তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দাবি নয়, বরং সমগ্র জাতির স্বার্থে কাজ করে থাকে। এ ধরনের student protest জনগণের সমর্থন পায় এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে।

তবে, ছাত্র আন্দোলনের পথ সবসময় মসৃণ ছিল না। অনেক সময়ই শিক্ষার্থীদের দাবি অগ্রাহ্য করা হয়েছে, তাদের উপর দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে। ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় অনেক শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার হয় এবং তাদের উপর নির্যাতন চালানো হয়। তা সত্ত্বেও, শিক্ষার্থীরা তাদের student protest চালিয়ে যায় এবং অবশেষে সরকারের কাছে তাদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য করে।

ছাত্র আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা দেশের সবচেয়ে সক্রিয় ও উদ্যমী অংশ। তারা সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে সচেতন এবং তাদের student protest এর মাধ্যমে সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম। বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরও সুসংগঠিত এবং কার্যকর আন্দোলন করতে পারে।

বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন কেবলমাত্র একটি ঐতিহাসিক অধ্যায় নয়, বরং এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া যা দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে নিয়ন্ত্রিত করছে। শিক্ষার্থীদের student protest এর মাধ্যমে সমাজে নতুন আলোচনার সূত্রপাত হয় এবং এটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কোটা আন্দোলনে নামছে বুয়েট শিক্ষার্থীরা

কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে উত্তাল বাংলাদেশ। মঙ্গলবার ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় দিনভর সংঘর্ষে মারা গিয়েছেন ৬ জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং পড়ুয়াদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বাংলাদেশের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে কোটা নিয়ে চলা আন্দোলনের এতজনের মৃত্যুর পরেও কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসছেন না বাংলাদেশের সরকারযদিও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার পথ খোলা রাখতে চাইছেন সেখানের সরকার এবং শাসকদল।

অন্যদিকে, এই আন্দোলন নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ।বুধবারই নিজেদের অবস্থানের কথা পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আঘাত করলে সরকার কঠোর হবেই বলে জানিয়েছেন তিনি। তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা ও ঢাকা মহানগরের আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় কোটা আন্দোলন প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘যে কোনও দাবির প্রতি শেখ হাসিনার সরকার সহনশীল।

তরুণ প্রজন্ম সংঘর্ষে লিপ্ত হবে, এটা কাম্য নয়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আঘাত করলে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করলে, জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টি করলে সরকারকে কঠোর হতেই হয়।’এখন কোটা আন্দোলন সাধারণ পড়ুয়াদের আন্দোলন নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে, সরকার এই আন্দোলন নিয়ে কঠোর অবস্থান নিতে চাইছে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাদের মতে, যেভাবে এই আন্দোলনকে ঘিরে বিভিন্ন দল এবং মহল তৎপর হয়েছে তাতে এখন আর তাদের নমনীয় হওয়ার সুযোগ নেই।

তবে, মঙ্গলবার এতজনের মৃত্যুর পরে পরিস্থিতি জটিল হয়েছে এবং সংকট বেড়েছে বলে মনে করেন শাসকদলের একাধিক নেতা।

তাই আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার মতে, কঠোর অবস্থান নেওয়া হলেও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই এর সমাধান করা দরকার।

কারণ, শেখ হাসিনার সরকারও কোটাব্যবস্থার সংস্কার চাইছে। আলোচনার ব্যাপারে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরকারের একটা যোগাযোগ তৈরি হয়েছে বলে দাবি করছেন তাঁরা।

কোটা বিরোধী আন্দোলনে জ্বলছে বাংলাদেশ, বন্ধ স্কুল-কলেজ

কোটা বিরোধী আন্দোলনে জ্বলছে বাংলাদেশ, বন্ধ স্কুল-কলেজ
অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হল বাংলাদেশের স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। একই সঙ্গে স্থগিত করা হয়েছে আগামী বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় সব শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষা।

এই পরীক্ষার তারিখ পরে জানানো হবে বলে জানানো হয়েছে। কোটা বিরোধী আন্দোলনে সংঘর্ষের জেরে বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার প্রেক্ষিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পড়ুয়াদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের শিক্ষা দফতর প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের জেরে উত্তাল হয়েছে বাংলাদেশ।

সেখানে কোটা প্রথা তুলে দেওয়ার দাবিতে লাগাতার আন্দোলন শুরু করেছেন পড়ুয়ারা। এই আন্দোলন ঘিরে সোমবারের মতই মঙ্গলবারেও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে মঙ্গলবার ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২৫০জনের বেশি।

অনেক জায়গায় গুলিও চলেছে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সেনা (বিজিবি) মতায়েন করা হয়েছে। আর, এদিনের এই সংঘর্ষের পরেই মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ক্লাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই নির্দেশের কথা জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রক। ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, স্কুল এবং কলেজের পড়ুয়াদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রকের আওতাধীন মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটগুলির ক্লাস পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে এদিন জানানো হয়।

এরই সঙ্গে আগামী বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় সব শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার স্থগিত হওয়া পরীক্ষার তারিখ পরে জানানো হবে।

তবে, পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী অন্যান্য পরীক্ষা যথারীতি নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। এদিকে, মঙ্গলবার সন্ধ্যার পরেও বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ, ভাঙচুর এবং আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে। ঢাকার পুরানো পল্টনে , জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দুটি বাসে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।

ঢাকা কলেজ–সংলগ্ন টিচার্স ট্রেনিং কলেজের ছাত্রাবাসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এরই সঙ্গে ভাঙচুর করা হয় একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও।

কোটা আন্দোলনে বিএনপি ভর করেছে ওবায়দুল

পরিস্থিতি সামলাতে সরকার ও আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে তাঁরা প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন। যদিও আন্দোলনকারীরা আলোচনায় যোগ দেবে কীনা সেটা এখনও জানা যায়নি।

অন্যদিকে, এই আন্দোলনের পিছনে উস্কানি এবং ষড়যন্ত্র থাকার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ।

এই ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে এবার অভিযান শুরু করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।বুধবার সকালে ডিবিপ্রধান বলেন, ‘অর্থ এবং অস্ত্র দিয়ে গুজব ছড়িয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে পরিচালিত করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে একটি গ্রুপ। যারা গুজব ছড়াচ্ছে এবং অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করছে, তারা অতীতেও নানা ষড়যন্ত্র করেছে।

আমরা তাদের ছাড় দেইনি। কারা এই পিছনে আছে তাদের নাম পাওয়া গিয়েছে। তাদেরকেও ছাড়া হবে না।’

কোটা বিরোধী আন্দোলনে মৃত ৫, পরিস্থিতি সামাল দিতে মোতায়েন সেনা

কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনে উত্তাল বাংলাদেশ। ছাত্রলীগের সমর্থকদের সঙ্গে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে। আজ মঙ্গলবারও রাস্তায় নামছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগ।

সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত পাওয়া সরকারি তথ্য অনুযায়ী অন্তত পাঁচজন মারা গিয়েছেন। তবে বেসরকারি মতে মৃতের সংখ্যা আরও বেশি। ছাত্রলীগ এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষেই তাঁদের মৃত্যু হয়েছে।
হাইলাইটস
কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনে উত্তাল বাংলাদেশ
রাস্তায় নেমেছে আন্দোলনকারী এবং ছাত্রলীগের সমর্থকরা
সংঘর্ষে প্রাণ গিয়েছে অন্তত পাঁচজনের

কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনে উত্তাল বাংলাদেশ। মঙ্গলবার এই নিয়ে আলাদা আলাদা ইস্যুতে রাস্তায় নামে আন্দোলনকারী এবং ছাত্রলীগের সমর্থকরা। সোমবারের মত মঙ্গলবারও দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।

মঙ্গলবার, দিনভর চলা এই সংঘর্ষে, সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত পাঁচজন মারা গিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। যদিও বেসরকারি মতে মৃতের সংখ্যা আরও বেশি।

আন্দোলনে উত্তাল বাংলাদেশ, রংপুরে নিহত এক পড়ুয়া

সোমবার বিভিন্ন জায়গায় যে হামলা হয় তার প্রতিবাদে মঙ্গলবার দেশজুড়ে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয় আন্দোলনকারীরা। পালটা কর্মসূচি ঘোষণা করে ছাত্রলীগ।

এদিন আন্দোলনের জেরে রাস্তা এবং রেল অবরোধ করা হয়। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। তাতে আহত হয়েছেন অনেকেই।

এদিনই রংপুরে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় আবু সাঈদ নামে এক পড়ুয়ার মৃত্যু হয়। তিনি ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের পড়ুয়া এবং কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।

আবু পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ আন্দোনকারীদের। এদিকে, ঢাকা কলেজের সামনে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে এক যুবক নিহত হয়েছেন। তাঁর পরিচয় জানা যায়নি।

আন্দোলনে উত্তাল বাংলাদেশ, রংপুরে নিহত এক পড়ুয়া

অন্যদিকে, চট্টগ্রামে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন।বিকালে সেখানের সংঘর্ষর পরে আহত কয়েকজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে তাঁদের মৃত ঘোষণা করা হয়। দুপুর তিনটার দিকে সেখানের মুরাদপুরে পড়ুয়াদের ওপর গুলি ছুড়লে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। সেখানে মৃতদের মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গিয়েছে। তাঁরা হলেন মহম্মদ ফারুক এবং মহম্মদ ওয়াসিম।

ফারুক ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী এবং ওয়াসিম চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ও কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক বলে জানা গিয়েছে। সেখানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন অন্তত ২০জন। এই সংঘর্ষের পর চট্টগ্রামে তিন প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে ‘প্রথম আলো’-কে জানিয়েছেন বিজিবির ব্যাটালিয়ন-৮ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহেদ মিনহাজ সিদ্দিকী।

Sheikh Hasina: ‘এ কোন দেশে বাস করছি’, কোটা আন্দোলন প্রসঙ্গে মন্তব্য শেখ হাসিনার

বাংলাদেশে চাকরি ক্ষেত্রের কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন তুঙ্গে। সরকারের পক্ষ থেকে কড়া বার্তা দেওয়ার পরও সরে যেতে রাজি নয় আন্দোলনকারীরা। এমনকী কোটাবিরোধীরা​ নিজেরকে ‘রাজাকার’দের সঙ্গে তুলনা করেছেন। সে দেশে শুরু হয়েছে ‘বাংলা ব্লকেড’। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। এই এবার এই প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জানিয়েছেন, বিষয়টি ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’।
হাইলাইটস
বাংলাদেশের কোটাবিরোধীরা নিজেরকে ‘রাজাকার’দের সঙ্গে তুলনা করেছেন
সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা তুলে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা
‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

নিজেরকে ‘রাজাকার’দের সঙ্গে তুলনা করেছেন বাংলাদেশের কোটাবিরোধীরা। সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা তুলে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। রবিবার রাতে, বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ দেখানোর পরে সোমবার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনেও অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেছেন। রবিবার রাতের মতই এদিনও নিজেদের ‘রাজাকারদের’ সঙ্গে তুলনা করেছেন তাঁরা। এটাকে ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবারের বিক্ষোভে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় 

সোমবারের বিক্ষোভে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা কলেজ, বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, ঢাকা নার্সিং কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পড়ুয়ারা যোগ দেন।

তাঁদের ওই সমাবেশ থেকে ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘কে বলে রে রাজাকার, ধিক্কার ধিক্কার’, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, প্রত্যাহার করতে হবে’ প্রভৃতি স্লোগান দেওয়া হয়। সেখানেই কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্তদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। দুইপক্ষই একে অপরের দিকে ইট–পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

আরেক দিকে, আন্দোলনকারীদের স্লোগান নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। যারা ‘রাজাকার’ বলে স্লোগান দেয় তাঁরা কোন চেতনায় বিশ্বাস করে বলেও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। হাসিনা বলেন, ‘রোকেয়া হলের মেয়েরা রাজাকার বলে স্লোগান দেয়! কোন চেতনায় তারা বিশ্বাস করে? এ কোন দেশে বাস করছি?’

নিজেদের ‘রাজাকার’ বলে স্লোগান দেওয়া কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা একাত্তরের গণহত্যা, মহিলাদের ওপর পাশবিক নির্যাতন এবং তাঁদের সহায়তাকারী রাজাকারদের ভূমিকা সম্পর্কে জানে কি না সেটা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শেখ হাসিনা।

সোমবার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে মন্ত্রণালয়-বিভাগে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর এবং বার্ষিক কর্মসম্পাদন চক্তি ও শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে এইকথা বলেন তিনি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে যারা নিজেদের রাজাকার বলতে লজ্জা পায় না তারা কোন চেতনায় বিশ্বাস করে? তারা কী শিক্ষা পেয়েছে?’

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী পরিবারের সদস্যরা সংরক্ষণের সুবিধা পান। সেটাও তুলে দেওয়ার দাবি করেছেন আন্দোলনকারীরা । রবিবারই এই নিয়ে নিজেদের অবস্থানের কথা জানান হাসিনা। তিনি জানিয়েছেন, আদালতের চুড়ান্ত রায় মেনেই তাঁরা সব কিছু করবেন।

একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন বলেও প্রশ্ন তোলেন তিনি। হাসিনা বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে বীর মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা সুবিধা পাবে না? তাহলে কী রাজাকারের নাতি-নাতনিরা কোটা সুবিধা পাবে?’

তবে, সরকারের অনুরোধ অমান্য করেই লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন পড়ুয়ারা। আরেক দিকে, আদালতের আদেশ না মেনে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে শক্ত হাতে দমন করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান।

Leave a comment