মিষ্টি ভালোবাসা
রাহুল , আমার বিয়ে হতে যাচ্ছে
– মানে?
– হ্যাঁ
সামনে বসে আছে নিধি । রাহুল এর সামনে।
একটা হলুদ রঙের শাড়ি হাতে নিয়ে । মুখে ক্রিম অথবা পাউডার মাখা। নিধি খুব সুন্দর দেখতে।
বিয়ের সাজে সাজলে সব মেয়েকেই লাগে।
তবে একটু আগে নিধি যে কথাটা বলল, তা শুনবার পর এই
- ভালোবাসার মাঝে ছুটে আসা কোন অনুভুতি
- হুমায়ূন আহমেদ এর অডিও বুক মন ভালো করার উপায়
- প্রেম কিভাবে একটি অলৌকিক ঘটনা? প্রেমের সংকেত গল্প
- আকাশে রোদ উঠেছে হঠাৎ বসন্তের আগমন বসন্তের ছোঁয়া
- ফ্রিল্যান্সিং কি?কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবো?
সুন্দর টুকুই অসহ্য লাগছে রাহুল এর কাছে।
– কি বলছ তুমি? মাথা খারাপ হয়েছে তোমার?
– মাথা খারাপ হবে কেন? মা বাবা বিয়ে ঠিক করেছে, আমিও করব।
–আর আমি কি করবতুমিও বিয়ে করবে। আমার থেকে সুন্দর একজন কে।
– আমি তো তোমাকে বিয়ে করব।
– তোমার বিয়ের বয়স হয়নি বুঝলে মেয়েদের বিয়ের বয়স হয়, ২০ এর পর। আর ছেলেদের হয়,বউকে ভালভাবে রাখার মত উপার্জন করার পর।
– এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করবে কিভাবে?
আমি তো আর কয়েক বছর পরেই এস্টাব্লিশড হব।
-আমার পরিবার এতদিন অপেক্ষা করবে না।
– নিধি, এই নিধি।
– বল।
– একটু বোঝাও না বাড়িতে। আমি তোমাকে অনেক ভালোভাসি নিধি।
– আমিও বাসতাম।
– এখন আর বাস না?
– ভেবে দেখলাম, তোমার মত বেকারের সাথে প্রেম করার চেয়ে,বাবা মায়ের পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করে ফেলা ভাল।
– এভাবে বোলোনা প্লিজ। খুব কষ্ট হয়। আমি তোমাকে ভালবাসি। আমাকে আর দু – এক বছর সময় দাও, আমি ঠিক ব্যবস্থা করে ফেলব
একটা।
– তুমি এক বছরে তো বের হতেই পারবেনা পাস করে। ব্যবস্থা করবে কিভাবে?
– ঠিক কিছু একটা করে নেব । দরকার হলে সারাদিন টিউশনি করাব।
– এসব আমার ভালো লাগে না।
– প্লিজ নিধি। একটু মা বাবাকে বলে বিয়েটা ভেঙ্গে দাওনা।
– কেন ভাঙব? আমার বাবা মা ছেলেকে অনেক পছন্দ করেছে।
তাছাড়া আমারও পছন্দ হয়েছে। এতো এতো টাকা তার।
– ওওও।
– কি হল?
– কিছু না। আচ্ছা কর বিয়ে তাকেই। আমার সাথে দেখা করতে না আসলেই পারতে
– তুমি আমার একমাত্র ভালবাসার মানুষ। এত বছর এক সাথে আছি আর এই সুখবর দিতে আসব না?
– হ্যাঁ, ভাল। দেয়া হয়েছে। এই বার যাও ।
– আর একটু বসে থাকি তোমার পাশে?
– বসে থেকে কি হবে?
– তাড়িয়ে দিচ্ছ?
– না।
– তবে? – কিছুনা। রাহুল মুখ নিচু করে বসে আছে। নিধির সামনে। বুকের ভিতর কেমন যেন লাগছে।
এতদিনের ভালবাসার মানুষটা অন্য কারও হয়ে যাবে এইটা ভেবে রাহুল এর আর ভালো লাগছে না।
কেমন হাসি মুখে কথাগুলো বলল। এতদিনের ভালবাসা শুধু কি তাহলে রাহুল এর একারই ছিল?
নিধি ভালবাসেনি?
ভালবাসলে, এভাবে অন্যের জন্য বউসেজে এসে, বিয়ের কথা হেসে হেসে বলতে পারত?
পারত না। একদম না। একদম ভালবাসে নি।
কিন্তু রাহুল ভালবাসে।
এভাবে হারিয়ে যেতে রাহুল দেবে না।
আঁকড়ে ধরবে নিধিকে।
জাপটে ধরে বলবে, তুমি শুধু আমার।
অন্য কারও জন্য বউ সাজতে পারবে না।
তবে এই সাহসটুকুই রাহুল এর নেই।
এই হারিয়ে যাবার সময়টাতেও শুধু কষ্ট পেতে পারছে।
চোখ ভেজাতে পারছে।
নিধি এসে একটু পাশ ঘেঁষে বসে।
এখনও মুখটা হাসি হাসি। এই হাসিতে গা জ্বলে যাচ্ছে রাহুল এর ।
আস্তে করে আঙ্গুলের উপর নিধি আঙ্গুল রাখল।
রাহুল হাত সরিয়ে নিল।
অন্যের বউ হবে রাহুল কে কেন ছোবে?
নিধি চোখ বড়-বড় করে বলল, বাব্বা! আমার ভালবাসার মানুষটার
দেখি রাগও হয়। খুব রাগ হচ্ছে আমার উপর?
কি করতে ইচ্ছা করছে? মারতে!
– রাগ করিনি।
– তবে কি অভিমান করেছ?
– না তাও করিনি।
– তবে কি করেছ ?
– কিছুই করিনি।
– ভালও বাসনি?
রাহুল থমকে গেল ও নিধি র দিকে তাকিয়ে থাকে এই কথায়। কি বলবে?
ভাল তো সে বাসেই। নিধি জানে। আবার নতুন করে শোনার কি? রাহুল তাও বলল -হ্যাঁ বাসি।
নিধি হাসতে শুরু করল। শব্দ করে।
লেকের জলের ভিতর সে শব্দ ঢেউ এর মত ছড়িয়ে পড়ছে।
এতোটা হাসির কথা রাহুল বলেনি।
রাহুলকে নিয়ে সবসময় হাসে নিধি।
খুব কান্না করছে রাহুল।
রাহুলের চোখে একটু জল
নিধি দেখে হাসি থামাতে পারছিনা
নিধি হাসতে হাসতে বলল
তুমি বোকা নাকি
রাহুল বলল কেন
বোকা হওয়ার কি আছে তুমি বিয়ে করতে যাচ্ছ
যাও
আমার চোখের জল দেখে আর কি হবে তুমি হাসো সুখে থাকার যা ওখান থেকে এখানে কেন এসেছো কেন এখনো আসতে পারতে তখন নিধি বলল তুমিতো সত্যিই বোকা দেখছি
রাহুল বলল ঠিক আছে আমি বোকাই এবার যাও এখান থেকে
নিধি আর একটু হেসে মুচকি হেসে বলল
কোথায় যাব আমি তোমায় ছেড়ে
রাহুল আবার বললো মানে
মানে আমি কোন বিয়ে-টিয়ে করছিলাম ঠিক আছে তোমার মত বোকা হয় না বুঝেছো একটা কথা বলতে না বলতে একদম বিশ্বাস করে বলে ফেলি বিশ্বাস করে নিয়েছো
কোথায় একটা নিজের অধিকার দেখাবে তুমি নিজে বিশ্বাস করে কেঁদে শেষ হয়ে যাচ্ছে
বলছি তো আমি বিয়ে করছি না রাহুল বলছি
তাহলে শাড়ির হাতে নিয়ে এসে আমাকে কেন যে বলছো এসব কথা
নিধি বললো বললাম আর কি দেখলাম তুমি কি বলতে চাও
আর নিজের অধিকার টুকু আমাকে বলতে পারো কিনা
রাহুল একটু মুচকি হেসে বললো সত্যি বলছো
হ্যাঁ হ্যাঁ সত্যি বলছি
রাহুল চোখের জল মুছে বলল কিযে খুশি হচ্ছে আমরা শুনি কি তোকে কি বলবো তুই আমার
সাথে এরকম কেন করো আমাকে শুধু শুধু মিথ্যা কথা বলেন কেন কাদালি বল
না হলে হিন্দির হাতটা চেপে ধরলো বললো এরকম করিস না দেখ আমি তোকে সত্যি খুব ভালোবাসি তোকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না এরকম করিস না কোনদিন বলল আরে ধুর পাগল আমি এরকম কেন করবো আমি তো বলেছি যে
পড়াশুনা শেষ করার আগে মেয়ের বিয়ে করব না
তোকে এর আগে জিজ্ঞেস করেছি তাহলে হাতে শাড়ি নিয়ে বসে আছিস কেন এবার বল
নিধি বলল
সামনে সরস্বতী পুজো এই শাড়িটা কিনে দিয়েছে পুজোতে পড়ার জন্য তাই তোকে দেখাতে এনেছি বাড়ি থেকে আসার সময় রাস্তার মাঝখানে প্ল্যানটা মাথায় আসলো
তাই তোকে এসব কথা বললাম আচ্ছা আর বলবো না ঠিক আছে আমি কোন বিয়ে করছি না ।।
আচ্ছা নিধি ঠিক আছে এখন তাহলে একটা কাজ কর
কি করব
আমার প্রমিস কর আর কখনো এরকম করবে না
যদি কখনো আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবি না প্রমিস কর তাড়াতাড়ি কর
ঠিক আছে আমি আর কখনো এরকম করবো না বলবো না আবার কোথাও যাবোনা তোকে ছেড়ে আমি কোথাও যাব না
এবার শান্তি
নিধি এবার বাড়িতে যায়
আরেকটু
বস সন্ধ্যে হলেই চলে যাব
নিধি তুই এখন কি করবি
কি করবো মানে
মানে তোর পড়াশোনা এখন কি করবি
পড়াশোনা কি কোরবো মানে আর কি করবো এখন কলেজে পড়াশোনা করছি তো করব
আগে কলেজে পড়াশোনা তো শেষ হোক তারপর দেখছি কি করা যায়
আচ্ছা ঠিক আছে
এইবার চল আর দেরি করিস না
আচ্ছা ঠিক আছে চল
একথা বলে নিধি আর
রাহুল দুজনেই বাড়ির পথে রওনা হল
যাওয়ার সময় দুজনে গল্প করতে করতে
চলতে থাকল
তারা বাড়ির অনেকটা পথ এগিয়ে এসেছিল
রাহুল আবার নিধি এর হাত ধরে বলল
নিধি ভালোবাসি তোকে আমি
আর তুই ও ভালোবাসিস আর এমন কথা বলিস না প্লিজ
ঠিক আছে তোকে প্রমিশ করলাম তো আর বলব না
বাড়িতে এসে আবার
সন্ধ্যার পর যে কাজকর্ম করা হয় বাড়িতে
নিধি ওর মা এর সাথে করতে থাকলো আর সেদিকে রাহুল বাড়িতে চলে গেল
এভাবেই নিধি ও রাহুলের জীবন
চলতে থাকল।।