পদ্মফুলের মাধুর্য প্রাণে প্রেমের অভিধান

akhi akter

পদ্মফুলের মাধুর্য প্রাণে প্রেমের অভিধান

আদিদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে অনিক সেখান থেকে চলে গেল। অনিক চলে যেতেই পদ্ম’র লজ্জা যেন আরো তরতরিয়ে বাড়তে লাগল। আদিদ কে কী বলবে সে বুঝতে পারছে না।

রাণীও লজ্জায় নত মস্তিষ্কে দাঁড়িয়ে আছে। আদিদ কিয়ৎক্ষণ তাদের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর সে ঠান্ডা গলায় পদ্ম কে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘আমার প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিবেন পদ্ম, আপনি কি আমাকে বিয়ে করতে চান?’

কবিতা আর করো না!-তানভির আহমেদ


পদ্ম ভয়ে ভয়ে তাকাল। রাণীর চোখে মুখে বিস্ময়। অতিরিক্ত বিস্ময়ে পদ্ম ও যেন কথা হারিয়ে ফেলেছে। আদিদ প্রচন্ড স্বাভাবিক।

পদ্ম বোঝেনা এই মানুষ টা সবসময় এত স্বাভাবিক কী করে থাকে। পদ্ম’র নিরবতা দেখে আদিদ ফের প্রশ্ন করে,
‘কী হলো পদ্ম, কিছু বলছেন না কেন?’
রাণী পদ্ম কে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো,
‘এই আপু, বলো না কিছু।’

কবিতা আর করো না!-তানভির আহমেদ


পদ্ম ঢোক গিলল। বুকের ভেতরে তার ধুকধুক করছে। সত্য বলতে বুক কাঁপে, ভয় লাগে। পদ্ম তাই সত্যটাও বলতে পারছে না। রাণী হাঁসফাঁস করছে। পদ্ম এখনো কেন চুপ করে আছে। আদিদের শীতল দৃষ্টি পদ্ম’র চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে। পদ্ম চোখ বুজে ফেলল। দুবার বড়ো বড়ো নিশ্বাস নিয়ে বললো,
‘হ্যাঁ, আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই।’


রাণী খুশিতে হাত তালি দিয়ে উঠল। পদ্ম’র চোখের পাতা এখনো নিমজ্জিত। আদিদ স্বাভাবিক। বললো,
‘ঠিক আছে, আমি মা’কে বলবো।’
পদ্ম এবার চোখ মেলল। এতো বড়ো বিস্ময় কাটিয়ে উঠা এতো সহজ নয়। সে অবাক কন্ঠে বললো,
‘আপনি সত্যিই আমাকে বিয়ে করবেন, ডাক্তারবাবু?’
‘কেন, আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না?’

রোমান্টিক চেহারা পাগলামীর মেলা


পদ্ম শুকনো মুখে বললো,
‘এতো কিছুর পরেও আপনার আমাকে বিয়ে করতে চাওয়াটা, সত্যিই অবিশ্বাস্য।’
আদিদ সরব গলায় বললো,
‘কী করবো বলুন, আপনার কাছে হেরে গেলাম। মন, মস্তিষ্ক প্রচুর জ্বালাচ্ছিল আমাকে তাই ভাবলাম এবার এর একটা বিহিত করা দরকার। আর মনে হলো, বিয়েই হলো এর একমাত্র বড়ো সমাধান।’


পদ্ম আদিদের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,
‘আমি কি কোনোভাবে আপনাকে বাধ্য করেছি, ডাক্তারবাবু?’
‘আমি কারোর বাধ্য না। আমার মন যা বলে আমি তাই করি। তবে, এক্ষেত্রে একটা কথা বলতে চাই পদ্ম; আপনি আমাকে চেনেন, আমার অতীতও জানেন। তাই আশা করছি, আমার অতীত কে আমার বর্তমানে আপনি টেনে আনবেন না।

অতীতে যে মানুষ টা আমার ছিল, সে আজীবন আমারই থাকবে। হয়তো তাকে ভুলতে পারবো না, তবে তার জন্য আমি আপনাকে কষ্ট দেব না, এইটুকু ওয়াদা আমি আপনাকে করতে পারি।’
পদ্ম ঠোঁট জোড়া প্রশস্ত করে হাসল। বললো,
‘আমিও আমার সীমা কখনো লঙ্ঘন করবো না, ডাক্তারবাবু।’

নতুন করে প্রেমে পড়ার গল্প রোমান্টিক প্রেমের গল্প


আদিদ আলতো হাসল। বললো,
‘প্রিপারেশন নিন। কাল মা’কে নিয়ে আসবো।’
পদ্ম কিঞ্চিত অস্বস্তি নিয়ে বললো,
‘ঠিক আছে।’


রাণীর খুশি দেখে কে। সে খুশিতে পদ্ম কে জড়িয়ে ধরলো। আদিদ তখন বললো,
‘কিন্তু আপনাদের পরিকল্পনা টা তো ভেস্তে গেল।’
রাণী তাকিয়ে বললো,
‘কোন পরিকল্পনা?’
আদিদ হেসে বললো,
‘ঐ যে আমাকে জেলাস ফিল করানোর পরিকল্পনা?’
‘এটা রাণীর প্ল্যান ছিল।’

প্রিয়-মানুষকে-হারানোর-কষ্ট


পদ্ম’র কথায় রাণী সম্মতি দিল। আদিদ বললো,
‘থাক, এখন আর অন্যজনের উপর দোষ চাপিয়ে লাভ নেই। আর এমনিতেও আপনাদের একসাথে দেখে আমি জেলাস হতাম না।’
রাণী তখন বললো,
‘এখানে যদি অনিক স্যার না থেকে অন্য কেউ থাকতো তাহলে অবশ্যই হতেন। অনিক স্যার কে তো আপনি চেনেন, তাই আপনি সবকিছু বুঝে গিয়েছেন।’

নৃত্যকলা ও রবীন্দ্রনাথ ! তাঁর হাত ধরেই নতুন যুগের সূচনা হয়েছিল


‘হু, আর আপনিও তো একগাদা মিথ্যে বলেছেন আমাকে উল্টা পাল্টা বোঝানোর জন্য।’
পদ্ম ব্রু কুঁচকে বললো,
‘ও আপনাকে কী বলেছে, ডাক্তারবাবু?’
‘না, কিছু না। যা হয়েছে হয়েছে, আগের কথা টেনে কোনো লাভ নেই। আমরা বরং এখন বিয়ে নিয়ে ভাবি। অনেক কাজ করতে হবে, বিয়ে বলে কথা।’


পদ্ম বুঝতে পারে রাণী কথা কাটানোর চেষ্টা করছে। আদিদ ও তাই তখন আর কিছু বললো না। তাকে হসপিটালে যেতে হবে বলে সে আর বেশিক্ষণ সেখানে দাঁড়াতে পারলো না, চলে গেল।


আদিদ চলে যাওয়ার পর রাণী আর পদ্মও তাদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল। রাণীর উত্তেজনা যেন শেষ হচ্ছে না। পদ্ম কে বিরক্ত করে তুলছে সে। কতকিছু কিনতে হবে, কত ব্যবস্থা করতে হবে।

90+ বাংলা সাহিত্যের প্রেম নিয়ে উক্তি – রোমান্টিক উক্তি

রাণীর উপর খুব চাপ। সে কীভাবে কী করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। পদ্ম বারবার তাকে ধমক দিচ্ছে, “রাস্তার উপর এইভাবে লাফালাফি করিস না, পড়ে যাবি।” কিন্তু কে শুনে কার কথা, সে লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটছে আর বিয়ে নিয়ে বিশদ আলোচনা করছে।
.
.
রাতের আকাশ। কৃষ্ণবর্ণ তার গায়ের রং। কাদম্বিনী গুচ্ছের ন্যায় ভাসমান। কী সুন্দর, সুশীল তার চলন। কত নিখুঁত তার বিস্তৃত। আজ দিন টা সুন্দর ছিল। রাত টাও ভীষণ সুন্দর। এই সুন্দর আকাশে একটা সুন্দর চাঁদ থাকলে ব্যাপারটা আরো পরিপূর্ণ হতো।


পদ্ম চমৎকৃত চোখে তাকিয়ে আছে কৃষ্ণাঙ্গ আকাশের দিকে। যেন তার আশ্চর্যের অন্ত নেই। এত অসুন্দর জীবনে এবার কি সত্যিই সুন্দর কিছু হতে চলছে? পদ্ম ভেবে পায় না, সত্যিই কি সে ডাক্তারবাবু কে পেতে চলছে?

এটা আবার তার কল্পনা নয়তো? চোখ খুললেই সবকিছু হারিয়ে যাবে না তো? এতো এতো কল্পনা সে জীবনে দেখেছে যে এখন সত্যিটাকেও মানতে কষ্ট হয় তার। মনে হয় এটাও বুঝি কল্পনা।


‘তুই কিন্তু এবার বেশি বাড়াবাড়ি করছিস, রাণী।’
পদ্ম’র ধমক রাণী কে থামাতে পারলো না। সে পদ্ম কে সাজিয়ে তবেই দম ফেলবে। পদ্ম রেগে মেগে আগুন হয়ে যাচ্ছে। তাও রাণী কে সে থামাতে পারছে না। পদ্ম’র নড়াচড়ায় রাণী বিরক্ত হয়ে বললো,
‘একটু বসো না শান্ত হয়ে। শাড়ি টা খুলে যাবে তো।’


‘যাক খুলে। তোর এতো যন্ত্রণা আমার ভালো লাগছে না। এতকিছু করার কী দরকার বলতো? উনারা কী আমাকে প্রথম দেখতে আসছেন। উফফ, এইভাবে ডাক্তারবাবুর সামনে যেতে আমার অস্বস্তি লাগবে।’
‘কোনো অস্বস্তি লাগবে না। বসে থাকো চুপচাপ।’


রাণী তার মন মতো পদ্ম’কে সাজিয়ে দিল। আয়নায় নিজেকে দেখে পদ্ম’র লজ্জা লাগল। নতুন বউ লাগছে, এইভাবে আদিদের সামনে যেতে হবে ভেবে পদ্ম’র অস্বস্তি কেবল বাড়ছে।


বিকেলের দিকে আদিদ এলো মা’কে নিয়ে। সাথে অভিও এলো। রাণী তাদের আপ্যায়ন করলো। চা নাস্তার ব্যবস্থা করলো। তারপর সে ভেতরে গিয়ে পদ্ম কে নিয়ে এলো। পদ্ম লজ্জায় তাকাতে পারছে না।

পদ্ম কে ওভাবে দেখে আদিদ চমকালো। রুবি হোসেন ভীষণ খুশি হলেন। পদ্ম কে তার পাশে নিয়ে বসলেন। খুশি খুশি গলায় বললেন,
‘এই যে আমার আদিদের বউ, আমি আর এক মুহূর্তও দেরি করবো না। আমি আমার বউ মা কে আজই ঘরে তুলবো।’

Leave a comment