আকাশে রোদ উঠেছে হঠাৎ বসন্তের আগমন বসন্তের ছোঁয়া
হঠাৎ বসন্ত
শেখ সাহেব মাতৃহারা দুই কুমারী মেয়েকে বাড়িতে রেখে শহরে গেলে রাতে ডাকাত পড়ে শেখ বাড়িতে। একজন নয়, দুজন নয়, পুরো সাত সাতজন ডাকাত এসেছিলো সে রাতে।
কি ভয়ালই না ছিলো অমাবস্যার সে রাত। পুরো ছ’ছয়টা লাশ পড়েছিলো শেখ বাড়িতে। রক্তের বন্যা বয়ে গিয়েছিলো পুরো বাড়িতে। সে রাতই পাল্টে দিয়েছিলো শেখ বাড়ির দুই কুমারী মেয়ের জীবন। বড় মেয়েটার তো সব স্বপ্ন দেখাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো সে রাতের ঘটনায়।
কত অপমান, কত লজ্জা আর বদনাম নিয়ে যে বাঁচতে হয়েছিলো বড় মেয়েটাকে। অমন সুন্দরী,সুনয়না মেয়েটার জীবন যে এভাবে নষ্ট হয়ে যাবে কে জানতো সেটা?? কত না যন্ত্রণাই যে সঙ্গী হলো ওর জীবনে।
- Exploring Pride and Prejudice: Why Jane Austen’s Masterpiece Endures
- Why Sonar Kella by Satyajit Ray Still Captivates Readers and Viewers?
- “নৌকাডুবি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেম ও জীবনের জটিলতার গল্প”💕
- 3 Motivational short story
- দেবদাস: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অমর প্রেম কাহিনী
ছোট মেয়ে সাদিয়া সুলতানা দিয়ার জন্মের সময়ই স্ত্রী মারা যান শেখ সবুজ সুলতানের।
বড় মেয়ে সুলতানা তানিয়া দিশা ছিলো তখন দু’বছর বয়সী। এরপর এই দুই মেয়েকে নিয়েই জীবন কাটতে থাকে শেখ সাহেবের। কখনোই মেয়েদেরকে তিনি মায়ের অভাব বুঝতে দিতে চান নি। কত যত্নে রেখেছিলেন মেয়েদেরকে! কে জানতো এতো বড় দুর্ঘটনা হবে সে রাতে শেখ বাড়িতে??
সেদিন সন্ধ্যার সময় খবর এসেছিলো শেখ সাহেবের বড় ফুফু মারা গিয়েছেন পার্শ্ববর্তী জেলা শহরে। রাতেই যে জানাজা দেয়া হবে।
কিন্তু পার্শ্ববর্তী সেই শহরে গেলে রাতের মধ্যে আর ফিরে আসা সম্ভব ছিলো না। শেখ সাহেব কখনোই মেয়েদেরকে বাড়িতে একা রেখে রাতে কোথাও যেতেন না। কিন্তু আপন বড় ফুফুর মুখটা শেষ বারের মতো একবার দেখা এবং তার জানাজায় অংশগ্রহণ থেকে যে তিনি নিজেকে কিছুতেই বিরত রাখতে পারেন নি।
মেয়েদেরকে’ও সাথে নিয়ে যেতে পারেন নি। কারণ পরদিনই যে ছিলো বড় মেয়ে সুলতানা তানিয়া দিশা’র ইন্টারমিডিয়েট প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষার শেষ দিন। কিন্তু কে জানতো সেই প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষাও তার দিতে হবে এক অকেজো,অসাড় শরীর নিয়ে??
ওহ্ হ্যাঁ, আপনাদের তো বলাই হয় নি আমি’ই শেখ বাড়ির সেই হতভাগা বড় মেয়ে সুলতানা তানিয়া দিশা। সেই ডাকাতির ঘটনার পরে চলে গেছে পুরো ১২ বছর।
সেই ঘটনা বদলে দিয়েছে আমার পুরো জীবন।তারপরেও সে রাতের ঘটনায় আমার বিন্দুমাত্র ক্ষোভ নেই। তখন আমার বয়স ছিলো আঠারো বছর আর ছোট বোন দিয়ার বয়স ছিলো ষোল বছর। ঘটনার পরে সুস্থ হলে বাবা আমায় বিয়ে দিতে চেয়েছিলো।
কোনো ছেলেই আমাকে বিয়ে করার আগ্রহ কোনো দিন দেখায় নি। ভালো ঘর থেকে কখনো কোনো প্রস্তাবও আসে নি। আর আসবেই বা কিভাবে?? এতো বড় দুর্ঘটনার পরে কেউ কি আমায় বিয়ে করবে??
তাই আমিও বাবাকে বলে দিয়েছিলাম যদি কেউ স্বেচ্ছায় আমাকে বিয়ে করতে চায় তবেই যেন আমার বিয়ের চিন্তা করে। আমার বিয়ের চেষ্টা করতে গিয়ে কখনো যেন কারো কাছে বাবা ছোট না হয়। বাবা আমার কথা রেখেছেন। কারো কাছেই নিজে থেকে গিয়ে আমার বিয়ের জন্য পাত্র চান নি।
জীবনে ৩০ টি বসন্ত পার হয়ে গেলেও এখনো কেউ’ই আমাকে বিয়ে করতে আসে নি।
এসবে আমার দুঃখ নেই। আমার দুঃখ হচ্ছে আমার জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে ছোট বোনটার’ও যে আটাশ বছর বয়স হয়ে গেলো। অনেক কষ্টে বাবাকে রাজি করিয়েছি ছোট বোন দিয়াকে বিয়ে দেয়ার জন্য।
বাবা চেয়েছিলো আমাদের জেলার মধ্যেই ছোট বোনের বিয়ে হোক। তাহলে আমার বোন যখন-তখন বাবার বাড়িতে আসা-যাওয়া করতে পারবে আর বাবা’ও মেয়েকে বেশী বেশী দেখতে পারবে। কিন্তু ছোট বোনের জন্যও এই এলাকায় কোনো পাত্র পাওয়া যাচ্ছিলো না।

সে এক ডাকাতির ঘটনায় এখনো মানুষের অনেক সন্দেহ আমাদের দু’বোনকে নিয়ে। এলাকায় পাত্র পাওয়া যায় নি বলে অবশেষে অনেক দূরের পাত্রের সাথেই বিয়ে দিতে হচ্ছে আমার বোনকে।
পাত্রের আত্মীয়-স্বজন হয়তো জানে না ১২ বছর আগে আমাদের বাড়িতে ডাকাত পড়ার ঘটনা। তাহলে হয়তো তাদের ছেলেকে এখানে বিয়ের করতে অনুমতি’ই দিতো না। কিন্তু পাত্র সবকিছুই জানে। সে জেনে-শুনেই এসেছে বিয়ে করতে।
আমার বোন দিয়া বলেছে সে কলঙ্কিনী না, পাত্র আমার বোনের কথা’ই বিশ্বাস করেছে। পাত্র ছাড়া ওর ফ্যামিলির আর কেউ জানেও না এই ডাকাত পড়ার ঘটনা।
আজ বিয়ে হচ্ছে আমার ছোট বোনের। সবাই অনেক কানা-কানি করছে আমাকে নিয়ে। আমার এসবে মনোযোগ নেই। বোনের বিয়ে হয়ে গেলেই যে আমি খুশি। আমার ছোট্ট বোন নিজের সংসার সাজাবে, এর চেয়ে খুশি আর কি থাকতে পারে আমার জীবনে??
বর এসে গেছে কিছুক্ষণ আগেই। বরযাত্রীদের’কে সবাই খাবার দিয়েছেন। বাবা সব টেবিল ঘুরে ঘুরে দেখছেন পরিবেশন ঠিক আছে কিনা। আমার বাবার অমায়িক ব্যবহারে সবাই খুব খুশি। আমার বোন দিয়া বউ সেজে বসে আছে।
অনেক খুশি আজ ওর চোখে। এ খুশি যে নতুন জীবনকে ছুঁয়ে দেখতে চাওয়ার খুশি। এ খুশি যে নতুন স্বপ্ন দেখার খুশি। আজ যে বসন্ত আসছে ওর জীবনে।
বিয়ে পড়ানো শুরু হয়ে গেছে। আমার বোনের হবু বর মামুন বারবার লুকিয়ে লুকিয়ে আমার বোনকে দেখছে। আমার বোনও ব্যাপারটা বুঝতে পেরে খুব খুশি। কাজী কবুল বলতে বলবেন কিন্তু হঠাৎ করেই কেউ একজন এসে বললো—
” এ বিয়ে বন্ধ করুন”।
আমাদের সব খুশি’ই যেন মুহূর্তেই শেষ হয়ে গেলো।
গল্পঃ হঠাৎ বসন্ত