“আপু জানিস আজকে বড় ফুপিরা আসবেন।সাথে মেঝো ফুপি আর ছোট ফুপিও আসছে। কি যে মজা হবে। কতো দিন পর সবাই আবার একসাথে হবো। এই আপু শুনছিস তুই”
অষ্টাদশী রমনী টেবিলে বসে পড়ছিলো। তখনই কানে আসে ছোট বোনের বলা কথাগুলো। অরিন খুশি হয় ফুপিদের আসার কথা শুনে। কিন্তু বড় ফুপির আসার কথা শুনে বুক কেঁপে উঠে তার। কত বছর দেখা হয় তা তাদের সাথে। অরিনের চোখ খুশিতে ঝলমল করে উঠে।কতো দিন পর কাজিনদের সাথে দেখা হবে!বেশ অনেক দিনই হলো তারা আসছে না। অরিন পড়ার টেবিল থেকে উঠে বই খাতা গুছিয়ে রাখতে রাখতে বলল,,,
“কিহ! সত্যি বলছিস ফুপিরা আসছে।তুই কিভাবে জানলি?”
হায়াত লাফাতে লাফাতে বলল,,,“হ্যাঁ রে আপু মাত্রই শুনলাম আম্মু ফোনে বলছিলো।আব্বু আর দাদা মিলে বাজারে গিয়েছে।”
অরিন হায়াতকে সাথে করে বের হয় রুম থেকে।হায়াত তো সেই খুশি,তাকে আর পায় কে!হায়াত দৌড়ে বের হয়ে যায় বাড়ি থেকে। অরিন হায়াতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মৃ*দু হেসে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ায়।রান্নাঘরে পা রাখতেই দেখে তার আম্মু অরুনি শেখ রান্নাবান্নার জিনিসপত্র গোছাতে ব্যাস্ত। অরিন দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ওড়নার কোণা মোচড়ামুচড়ি করছে।
অরুনি শেখ অরিনকে ওড়না মোচড়ামুচড়ি করতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলেন,,“কিছু বলবি অরিন”
অরিন সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে,,, “আম্মু হায়াত বলল ফুপিরা আসছে নাকি!”
অরুনি শেখ কাজ করতে করতে বলেন,,,“হ্যা আসছে।তুই তোর রুমটা গুছিয়ে ফেল।বাকি রুমগুলো আমি রিনুকে দিয়ে গুছিয়ে নিচ্ছি।আর শোন উপরের একদম কোনার রুমটা তুই নিজে গোছাবি।রিনু পারবে না সুন্দর করে গোছাতে তাই তুই গোছাবি বুঝলি?”
“আচ্ছা ঠিক আছে”বলে অরিন নিজের রুমে চলে আসে।নিজের রুমের অবস্থা দেখে কপাল চাপড়ায় অরিন। এতো অগোছালো সে। ধীরে ধীরে নিজের রুমটা গোছানো সম্পূর্ন করে।এরপর চলে আসে কোনার রুমটাতে। রুমটার অবস্থা তেমন একটা ভালো না।ওড়না কোমড়ে বেঁধে নেমে পরে রুমটা পরিষ্কার করতে। দীর্ঘসময় পর রুমটা গোছানো হয়। অরিন চোখ বুলিয়ে নেয় একবার রুমটাতে। নাহ সব ঠিক আছে। জানালার দিকে চোখ পরতেই সেগুলো খুলে দেয়।ঠান্ডা বাতাস এসে পর্দাগুলো উড়িয়ে দিচ্ছে।ঘরির দিকে চোখ পরতেই দেখে দেড়টার এর বেশি বাজে।আযান কখন দিয়েছে টেরই পায়নি সে কাজ করতে করতে।
অরিন কপালের ঘাম মুছে দরজা টেনে বের হয় রুম থেকে। অরিন মনে মনে ভাবে হয়তো রুমটা তার বড় ফুপির জন্য।রুমে এসে একটা গোলাপী রঙের জামা বের করে গোসল করতে যায়।গোসল সেরে এসে দেখে ২টা বেজে গিয়েছে। অরিন চুল থেকে তোয়ালে খুলে বারান্দায় টানানো দড়িতে মেলে দিলো। রুম থেকে বের হয়ে দাদির কাছে আসে। দাদি নামাজ পরে তসবিহ গুনছেন।
“এই যে বুড়ি খেয়েছো তুমি।মনে হয় না তো খেয়েছো।চলো খাবে চলো।”
অরিনের গলা পেয়ে চোখ মেলে তাকান খাদিজা বেগম। প্রিয়তাকে দেখে হাসেন তিনি। অরিনও দাদিকে হাসতে দেখে নিজেও হাসে।খাদিজা বেগম তসবিহ রেখে তার কান টেনে ধরে বলে,,,
“তোর আমাকে বুড়ি মনে হচ্ছেরে ছুকড়ি।আমি এখনো জোয়ান আছি । আমায় দেখে কেউই বুড়ি বলবে না। আর তুই আমায় বুড়ি বলছিস।”
অরিন খিলখিলয়ে হেসে দেয় দাদির কথায়।খাদিজা বেগম অরিনের কানটা আরো জোরে চেপে ধরে।সে কান ছাড়াতে ছাড়াতে বলে,,
“আহ দাদি ছাড়ো লাগছে তো।তুমি তো বুড়ি হয়ে গিয়েছো।আমি দাদুকে আবার বিয়ে দেবো।আমার দাদুর জন্য একটা লাল টুকটুকে বউ নিয়ে আসবো”
অরিনের কথায় খাদিজা বেগম রা*গার ভান করেন।খাদিজা বেগম চোখ ছোট ছোট করে বলেন,,,
“তবেরে ছুড়ি আমার স্বামীরে বিয়ে করাইতে চাইস।তোর বররে একবার পাই আমি। তোর জন্যও আমি সতীন আনবো।”
অরিন খাদিজা বেগমকে মুখ ভেংচি কে*টে বলে,,,“এএ আইছে আমার বরকে তো আমি দেখাবোই না তোমাকে।দাড়াও খুব তাড়াতাড়ি তোমার সতীন আনার ব্যবস্থা করছি”
“কিরে দাদুভাই কার সতীন আনার ব্যবস্থা করছিস তুই।”
আজাদ শিকদার রুমে প্রবেশ করতে করতে কথাটা বললেন। অরিন তার দাদুভাইয়ের কথায় হেসে বলে,,,“তোমার জন্য নতুন বউ আনার কথা বলছি দাদুভাই।”
আজাদ শিকদার হাসতে হাসতে বলেন,,,
“আর লাগবে নারে দাদুভাই একজনকে নিয়েই পারি না।তুই আবার আরো একজন আনার কথা বলছিস”
অরিন খাদিজা বেগমের দিকে তাকে মুখ ভেংচি দিয়ে দৌড়ে বের হয়ে যায় রুম থেকে।খাদিজা বেগম আর আজাদ শিকদার হাসে আরার কান্ড দেখে।তার জানে মেয়েটা বড্ড দুষ্টুমি করে তাদের সাথে।তাদের দুজনকে মাতিয়ে রাখে। তারাও তাল মেলান নাতির সাথে। বাড়িতে দুটোই মেয়ে। কোনো ছেলে নেই। খুব আদরের অরিন এবং হায়াত।
–
বৈশাখ মাসের শে*ষ সময়।আকাশে ঘনকালো মেঘের আনাগোনা।পড়ন্ত বিকাল।বিকাল হয়েছে বেশ খানিকটা সময় হলো।রোদের ছিটে ফোঁটাও নেই আকাশে। অরিন বারান্দায় বসে রং তুলি দিয়ে কিছু আকার চেষ্টা করছে।তার ভেতরেই অরুনি শেখের ডাক পরে। অরিন দৌড়ে অরুনি শেখের কাছে আসে।অরুনি শেখ অরিনকে দেখে বলে,,
“অরিন তাড়াতাড়ি আম গাছ থেকে কয়েকটা পাকা আম পেরে নিয়ে আয় তো।তোর ফুপিরা এখনই চলে আসবে কিন্তু”
“এখনই যাচ্ছি আম্মু।”
অরিন বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় কারো বুকের সাথে ধাক্কা খেলো।নিজেকে সামলে লোকটার দিকে না তাকিয়ে “দুঃ*খিত” বলে দৌড়ে চলে যায়।লোকটা সানগ্লাসটা খুলে পকেটে দুহাত গুঁজে অরিনের যাওয়ার পানে তাকিয়ে বলে,,“হু ইজ সি?”
কথাটা বলেই হনহন করে বাড়ির ভেতরে ঢুকে যায়। অরিন বাড়ির পেছনে এসে আম পেরে বেশ কিছুক্ষণ পর বাড়িতে ঢোকে।বাড়িতে ঢুকতেই বাড়ি ভর্তি লোকজন দেখে চমকে যায় সে।কিছুটা ভরকেও যায়।একটা ছেলে অরিন আপু বলে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে তাকে। অরিন পরতে পরতে নিজেকে বাঁচায়।
অরিন আমগুলো রিনুর হাতে দিয়ে বাচ্চাটাকে কোলে তুলে বলে,,“ভালো আছো তুমি তাতানপাখি”
তাতান আধো আধো গলায় বলে,,,
“আমি ভালো আছি অরিন আপু। তুমি কেমন আছো”
অরিন তাতানের সাথে কথা বলতে বলতে বড়দের সবার কাছে যায়।সবাইকে সালাম দিয়ে কথা বলতে থাকে।বড় ফুপি অরিনকে নিজের কাছে ডাকে। অরিন এগিয়ে তার কাছে যেতেই অনামিকা ইসলাম জড়িয়ে ধরেন অরিনকে। অরিনের একটু অস্বস্তি হলেও নিজেকে সামলে নেয়। অরিনকে নিজের বুক থেকে উঠিয়ে অনামিকা ইসলাম তার গালে হাত দিয়ে বলে,,
“অরিন মামনি কতো বড় হয়ে গিয়েছিস তুই সেই ছোট্ট বেলায় দেখেছিলাম তোকে।ভালো আছিস তো মা তুই”
অরিন মিষ্টি হেসে উত্তর দেয়,,,“জি আলহামদুলিল্লাহ বড় ফুপি ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন”
“এই দেখো মেয়ের কথা আপনি বলছে আমায়।তুমি করে বল বোকা।ছোট্ট বেলায় তো এই ফুপি ছাড়া কাউকে চিনতেই পারতিস না”
সবাই হেসে অরিনের কান্ডে। অরিন ল*জ্জা পায় বেশ। নিজেকে নিজেই বকতে থাকে। আপনি কেনো বলতে গেলো। আপনি না বললে তো আর ল*জ্জায় পরতে হতো না। তার আবার তুমি বলতেও সংকোচ হচ্ছিল তাই আপনি বলেছে।সেই কোন ছোটবেলায় দেখেছে তারপর আর দেখা হয়নি।
“ল*জ্জা পাস না মা বুঝতে পেরেছি অনেক বছর দেখা না হওয়ার ফলে এমন হয়েছে।সমস্যা নেই ক’দিন যাক এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে।”
এরপর সবাই টুকটাক কথা বলে হালকা পাতলা নাস্তা করে রেস্ট নিতে চলে যায়।হায়াত তো ভাই বোনদের সাথে খেলছে।
অরিন উপরে নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পরে। ভীষণ ক্লান্ত লাগছে তার। আজকে অনেক কাজ করেছে সে। তার বয়সী এবং বড় কাজিন গুলো এখনো আসেনি, তারা হয়তো আগামীকাল আসবে। দরজা খোলার খটখট আওয়াজে চোখ মেলে তাকায় সে। উঠে বসে ওয়াশরুমের দিকে তাকাতেই চোখ বড়বড় হয়ে যায় অরিনের।
ওয়াশরুম থেকে একজন পুরুষ টিশার্ট ট্রাউজার পরে গলায় টাওয়াল ঝুলিয়ে বের হয়েছে। চুল থেকে পানি পরছে। যা দেখে অরিন বুঝতে পেরেছে পুরুষটি মাত্রই গোসল করে বের হয়েছে। তার রুমে পুরুষ মানুষ আসলো কোথা থেকে বুঝতে পারলো না সে। অরিন চিৎকার করতে যাবে তার আগেই পুরুষটি এসে ওর মুখ চেপে ধরে। ফিসফিস করে বলল,,
“হেই ডোন্ট সাউট।আমি মুখ ছাড়ছি চিৎকার করবে না”
কথাটা বলেই লোকটা আরার মুখ ছেড়ে দিয়ে কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। অরিন হাঁপাচ্ছে। এতো জোরে মুখ চেপে ধরেছিলো যে সে নিঃশ্বাসটা ঠিকমতো নিতে পারছিলো না। অরিন হুট করে নিজের রুমে পুরুষ মানুষ দেখে ভ*য় পেয়েছে খানিক। টেনে টেনে বলল,,
“কে…..কে আ….পনি!আমার রুমে কি করছেন হ্যা।অস*ভ্য লোক মেয়ে মানুষের রুমে চলে এসেছে। আমি এখনি আব্বু আর দাদুমনিকে ডাকছি”
অরিন কথাটা বলেই চলে যেতে নিলে লোকটা তার হাত ধরে ফেলে। শান্তু সুরে তাকে উদ্দেশ্য করে শুধায়,,,
“হেই মিস বোম্বাই মরিচ!প্লিজ স্টপ। আমি অনামিকা ইসলামের ছেলে ধূসর আহসান।”
চলবে~



Your point of view caught my eye and was very interesting. Thanks. I have a question for you.
I don’t think the title of your article matches the content lol. Just kidding, mainly because I had some doubts after reading the article.