ময়ানামতি ওয়ার সিমেট্রি

Nusrat Rahman Eva

ময়ানামতি ওয়ার সিমেট্রি

কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের উত্তর কোল ঘেষে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পশ্চিম পাশে বুড়িচং উপজেলায় এর অবস্থান। স্থানীয় ও আশপাশের এলাকায় এটি ইংরেজ কবরস্থান নামেই সমধিক পরিচিত।

এটি কমনওয়েলথ যুদ্ধ সমাধিস্থল। ১৯৪১-১৯৪৫ সালে বার্মায় সংঘটিত যুদ্ধে যে ৪৫০০০ কমনওয়েলথ সৈনিক নিহত হন, তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে মিয়ানমার (তৎকালীন বার্মা), আসাম, এবং বাংলাদেশে ৯টি রণ সমাধিক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে।

বাংলাদেশে দুটি কমনওয়েলথ রণ সমাধিক্ষেত্র আছে, যার অপরটি চট্টগ্রামে অবস্থিত।

প্রতিবছর প্রচুর দর্শনার্থী যুদ্ধে নিহত সৈন্যদের প্রতি সম্মান জানাতে এসকল রণ সমাধিক্ষেত্রে আসেন।ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি ৪ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত।

এখানে বিশ্বের ১৩টি দেশের ৭৩৭ জন কমনওয়েলথ যোদ্ধাকে সমাহিত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অবিভক্ত ভারতের ১৭৮, যুক্তরাজ্যের ৩৫৭, পূর্ব আফ্রিকার ৫৬, পশ্চিম আফ্রিকার ৮৬, জাপানের ২৪, কানাডার ১২, অস্ট্রেলিয়ার ১২, নিউজিল্যান্ডের ৪, রোডেশিয়ার ৩ জন ও দক্ষিণ আফ্রিকা, বেলজিয়াম, পোল্যান্ড ও বার্মার একজন করে যোদ্ধার সমাধিক্ষেত্র এই ওয়ার সিমেট্রি।

ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রিতে ইসলাম ধর্মের ১৭২ জন, বৌদ্ধ ধর্মের ২৪ জন, হিন্দু ধর্মের ২ জন আর বাকী সবাই খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী যোদ্ধা সমাহিত আছেন। নিহত এসব যোদ্ধাদের মধ্যে ৫৬৭ জন নাবিক, ১৬৬ জন বৈমানিক ও ৩ জন সৈনিক।

ওয়ার সিমেট্রি ঘুরে দেখা গেছে, সমাধিস্থল এলাকায় সবুজ ঘাসের গালিচায় শোভা পাচ্ছে হরেক রকমের ফুল। এর ভেতরের দেওয়ালে এই সমাধিক্ষেত্রের ইতিহাসের বিবরণ ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় লেখা রয়েছে।

ভেতরে যাওয়ার জন্য রয়েছে প্রশস্ত পথ, যার দুই পাশে সারি সারি কবরের ফলক। যোদ্ধাদের ধর্ম অনুযায়ী তাদের কবর ফলকে নাম, মৃত্যু তারিখ, পদবির পাশাপাশি ধর্মীয় প্রতীক রয়েছে।

চিরনিদ্রায় শায়িত সৈনিকদের পরিবার সমাধিস্থলে দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করেন।

দূরদূরান্ত থেকে অসংখ্য দর্শনার্থীও নিহত সৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। বছরের অন্যান্য সময়ও এখানে দর্শনার্থীদের ভিড় জমে।

Leave a comment