প্রেমের মধ্যে মনের বাঁধা সহজে ভাঙা যায় না
তুশি তখন রাগে গজগজ করতে চলে যায়।
তুষার হুহু করে হাঁসতে থাকে।
সকালের নাস্তা তৈরি করে আমেনা বেগম জান্নাত আর তুশিকে ডাকতে গেলো, এতো ডাকাডাকির পরও উঠাতে পারলো না। শেষে পায়ের তালুতে চিমটি দিলেন আর তখনই তুশি ধরফরিয়ে উঠে পরলো।
এরপর তুষার আর বাকি কয়েক ছেলে মেয়েকে ডেকে, ফ্রেশ হওয়ার তারা দিয়ে উনি চলে গেলেন খাবার টেবিলের কাছে।
তুষার এক হাতে ব্রাশ আর অন্য হাতে ফোন নিয়ে কলপাড়ে চলে আসলো, তখন দেখলো জান্নাত হাত মুখ ধুয়ে চলে যাচ্ছে। তার যে অনেক অনেক খিদে পেরেছে তাই ছুটলো খাবার টেবিলের কাছে।
- ফ্রিল্যান্সিং কি?কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবো?
- ক্রাশ এর সাথে প্রেম
- অসম্পূর্ণ ভালোবাসা | ছোঁয়া লেগেছিল মাএ
- হুমায়ূন আহমেদ স্যারের এর কিছু মজার উক্তি
- সে এসেছিল ,হারিয়ে যেতে – তানিয়া ত্বোহা
তুশি ঘুমে ঢুলুঢুলু হয়ে কলপাড়ের কাছে আসছে, তুষার আড়চোখে তাকে পরখ করছে, পড়নে তার কালো থ্রি-পিস, কোমর পর্যন্ত চুলগুলো এলোমেলো, চোখ দুটো ফুলেফেপে আছে, বিরক্তিকর চাহনি নিয়ে এদিকেই আসছে, গোলাপির ন্যায় রক্তজবা ঠোঁট দুটির কাছে তুষারের চোখ যেতেই কালকের রাতের কথা মনে পড়ো গেলো, এখন আবার তুশিকে এ অবস্থা দেখে তুষার জেনো নিজের প্রতি কন্ট্রোল হাড়িয়ে ফেলবে। যদি কালকে রাতের কথা তুশি ঘুনাক্ষরে টের পায়, তাহলে তুষার শেষ।
সরাসরি সামনে এসে বলবে,
“নি-র্লজ্জ, চরিত্র’হীন, অসভ্য পুরুষ মানুষ। দূর হও আমার সামনে থেকে! “
যদিও তুশু’চুন্নির বুঝার কথা না, ঘুমালে তো তার আবার হুশই থাকেনা, সেখানে এসব বুঝা ওর জন্য অনেক দূরের কথা। শুধু চাপাবাজি করতেই পারে, হুহ আর কোনো কাজেরই না। সবার বুদ্ধি থাকে মাথায় আর ওর বুদ্ধি এখনো হাঁটুতেই পড়ে আছে ||
এসব ভেবে ভেবে তুষার বহু কষ্টে নিজেকে সামলিয়ে তুষার ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে অন্যদিকে ঘুরে গেলো। ভাবটা এমন যেনো তুশি যে সামনে আছে সে জানেই না।
এদিকে তুশি কলপাড়ে এসে তুষারকে দেখে থমকে গেলো, সাদা টি-শার্ট, অফ হোয়াইট থ্রি-কোয়াটার প্যান্ট, চুল গুলো চোখের সামনে এলোমেলো হয়ে খেলা করছে, গালে খুঁচা খুচা দাড়ি। উফ জাস্ট ফিদা।
তুশিকে এভাবে দেখতে দেখলে এখন যে কেউই এক বাক্যে বলে দিতে পারবে সে তার চোখ দিয়ে তুষারকে গিলে খাচ্ছে।
তুষার হুট করে ভ্রু দুটি নাচিয়ে বললো,
“এই এই তুশুর বা’চ্চা এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো হ্যাঁ? আমার মতো ভোলাভালা ছেলেকে তুই এভাবে কু-নজর দিচ্ছিস! ভাই তোর শরম না থাকতে পারে আমার তো আছে, হায় আল্লাহ মনে তো হচ্ছে, তুই আমাকে তোর ওই জ্বলসে যাওয়া চোখ দুটো দিয়ে গিলে টুপ করে খেয়ে ফেলছিস। এই যা যা বদ মহিলা চোখের সামনে থেকে যাহ।। আমার লজ্জা করছে!
তুশি থমকে গেলো তুষারের কথায়, যখন ও বুঝে গেলো তাকে ফাউ’ল কথা বলছে তখন সে আগের ক্রাশ খাওয়া ভুলে গিয়ে বললো,
“কে ভোলাভালা? সিরিয়াসলি তুমি? আর আমি তোমাকে বদ নজর দিচ্ছি। তোমার মতো বন মানুষকে শুধু আমি কেনো জঙ্গলের ভুতও নজর দিতে ভুলে যাবে, যত্তসব ফাউল লোক। এহহ আসছে আমার রাজকুমার, খবি’শ বন’মানুষ!
“তোর জামাই জঙ্গলের ভুত, আর বড়শড় বনমানুষ! “
তুশি তখন ভাবলো কথা বললেই কথা বাড়বে, খিদে পেয়েছে তাই মাথা কাজ করবেনা আগে খেয়ে নেই তারপর দেখে নিবো। তাই সে কলপাড় থেকে ব্রাশটা নিয়ে নিলো।
তুশি কিছু বলছে না বলে তুষার আবার বললো,
“শুনলাম স্কুলে যাওয়ার সময় নাকি রাস্তাঘাটে ছেলেদের দিকে কুনজর দিস, আবার ক্লাসে মন না দিয়ে স্যারদের দিকে তাকিয়ে থাকিস, কলেজের গেইটে উঁকি দিয়ে সিনিয়র ভাইদের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকিস? তাহলে এইসব করিস তাইনা,আচ্ছা তোর পড়াশোনা করতে ভালো লাগেনা সোজাসুজি বলবি তো। ঠিক আছে ফুুপাকে বলে বিয়ের ডেটটা পাক্কা করছি। না না আমি তোর মতো গোবর গণেশকে বিয়ে করবো না,কোথায় তুই ফেলটুশ আর কোথায় আমি একজন ঢাবিয়ান। তোর জন্য পাশের পাড়ার কাশেম পাগলই পারফেক্ট! কি বলিস তুশু বেবি। “
তুশি এ কথা শুনে ভিষণ রেগে গেলো, রাগে গজগজ করতে করতে তুষারের কাছে এসে টি-শার্ট একদম শক্ত করে চেপে ধরে বললো,
“কি বললি তুই! আবার বল, তুই আজ শে…”
আর বলতে পারলো না তার আগেই তুষার তার মুখ থেকে ব্রাশটা বের করে তুশির মুখের ভেতর ঢুকি’য়ে দিলো।
তুশি কাঁদো কাঁদো হয়ে শার্ট ছেড়ে দূরে চলে যাবে, তখন খপ করে ওর হাত ধরে ফেললো। একদম দেখার মতো হয়েছে তুশির চেহারা।
তুষার ঠোঁট কামরে হেঁসে বলে,
“এটা হচ্ছে তোর ৫ বছরের সিনিয়রকে তুই বলার শাস্তি, আমার রাগীনিকে কিভাবে শান্ত করা যায় তা আমি খুব ভালো করে জানি। আর তুই আমার মুখের সামনে এভাবে তেড়ে আসলি কেনো? মুখের ভেতর যে গন্ধ নিয়ে ঘুরিস কেউ আগে তোকে বলেনি? এ্যা, ছিঃ, উয়াক, কি গন্ধ তোর মুখে। যা যা দূরে যা। কি দূর গন্ধ!
এ বলে তুষার এক জাটকায় তুশিকে ছেড়ে দিলো। তুশি রাগে দুঃখে কান্না করে দিয়েছে, ইচ্ছে করছে ২ হাত পা ছড়িয়ে মাটিতে বসে ভ্যা ভ্যা করে কান্না করতে।
তুশার মুখ ধুয়ে চলে গেলো, তখনই আমেনা বেগমের ডাক ভেসে আসলো।
তাই তুশি কান্না বন্ধ করে, কুলকুচি করলো,তারপর ব্রাশ করে খেতে গেলো। এর প্রতিশোধ তো অন্যভাবে সে নিবেই। সকাল সকাল এভাবে বেয়াদবি, কোনো ভাবেই সে মেনে নিবে না।
খাওয়ার সময় তুষার কয়েকবার মুখ ভেঙচি দিলেও, তুশি ছিলো চুপচাপ। চুপ করেই ভাবতে হবে কি করা যায়। ইচ্ছে করছে তুষারের বা’চ্চার চুল ছিড়ে ফেলতে।
খাওয়ার পাট চুকিয়ে তুশির মা সকলকে বললো রেস্ট নিয়ে তারপর মেয়েরা যাতে তারাতাড়ি পার্লারে চলে যায়, নাহলে দেরী হয়ে যাবে ছেলের বাসায় যেতে যেতে।
তাই সকলে কাজ সব গুছিয়ে গল্প শুরু করলো আর ছেলে মেয়েরা রুমে বসে কে কিভাবে সাজবে সেই আলাপে ব্যস্ত, তুশি চুপচাপ সবার কথা শুনছে। তার ভালো লাগছেনা মুটেও||
তুষার যখন দেখলো তুশি চুপচাপ, তখন ভাবলো বেশি করে ফেলেছি হয়তো। রাগ করে বুম হয়ে আছো, যখন তখন ফে’টে যেতে পারে।
সত্যি সত্যি রাগ করেছে নাকি জানতে তুষার রিমিকে বললো,
” তুশিকে এক কাপ চা দিয়ে যেতে বল তো, এক্ষণি লাগবে আমার। তাড়াতাড়ি আসতে বলিস।
” কেনো ভাইয়া কাকিয়া চা করে দিলে সমস্যা কি? হুম হুমমম, আচ্ছা আচ্ছা ভাইয়া যাচ্ছি!
এমনি দিলো এক দৌড়। রুমে এসে তুশিকে বললো,
“তুশি তোর তুষার ভাই চা নিয়ে যেতে বলেছে, এখুনি মানে এখুনি, দেরি যাতে না হয়, যা উঠ!
“আমি পাড়বো না। আমাকে কি কাজের বুয়া পেয়েছে, যে যা হুকুম করবে তাই শুনতে হবে আশ্চর্য!
এ বলে বসেই থাকলো। রিমি তুষারের কাছে গিয়ে বললো,
“তুশি বলেছে আসতে পারবেনা,সে কারো কাজের বুয়া নয়।
তুষার এ কথা শুনে নিজেই গেলো তুশির রুমে, আর ডাকলো,
“তুশি চা আনতে হবেনা, কথা আছে বের হ”
তখন তুশির মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি খেলা করলো, বলল,
“আচ্ছা রুমে যাও আমি আসছি!
“ঠিক আছে ৫ মিনিট”
“হুম'”
তুষার যাওয়ার পর তুশি রান্না ঘরে যেয়ে গ্যাসে পানি গরম দিলো এরপর ৫টা মরিচ সেই পানিতে দিয়ে নিলো, পানি গরম হওয়ার পর স্পেশাল চা বানিয়ে তুষারের রুমে গেলো।
তুষার তখন বিছানায় বসে আছে, তুশিকে চা নিয়ে আসতে খেয়ে খানিকটা অবাক হলেও প্রকাশ করলো না।
তুশি বললো,
“এই নাও চা”
“চায়ের কথা পরে, আগে বল রাগ করে আছিস?”
“আরে নাহ, এসব ছোটো খাটো জিনিস নিয়ে তুশি রাগ করেনা!
“ওহহহ! আচ্ছা, ভুলেই গেছিলাম।
“হুম,চা ঠান্ডা হয়ে যাবে খেয়ে নাও, অনেক কষ্টে বানিয়েছি। ” ( একটু ঢং করে বললো তুশি)
তুষার চা হাতে নিয়ে একটু করে চুমুক দিলো, তখনই ওর ঠোঁট ঝালে পুড়ে গেলো, হুট করে তুশির দিকে তাকিয়ে দেখলো তুশি ঠোঁট টিপে হাসছে, দেখে মনে হচ্ছে বিশ্বজয়ের মতো বড়শড় কাজ করে ফেলেছে।
তুশি রুম থেকে বের হতে যাবে তখন তুষার চায়ের কাপ টেবিলে রেখে বড় বড় পা ফেলে তুশিকে ধরে ফেলল। তুশির দুইবাহু শক্ত করে ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো, দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“আমার সাথে লাগতে আসিস?
ভেবে ছিলাম সরি বলবো কিন্তু না তুইতো আরেক ধাপ উপরে, তাহলে আমাকেও যে সেভাবেই মানাতে হবে সুইটহার্ট।
তোমার চা হেব্বি হয়েছে এতো সুন্দর চা তুমি কি টেস্ট করে দেখবে না? বলো!
এমনিতে তুশি হাতের ব্যথায় চোখ খিঁচে নিয়েছে, চোখ দিয়ে পানি পরছে ।
এখন তুষারের মুখে এমন কথা শুনে ভিষন ভয় লাগছে, কি না কি করে বসে। চা বানানোর আগে তো সে এতোকিছু ভেবে বানায়নি,সকালে তার সাথে সে কি করলো তার বেলা!
তুশি যখন এসব ভাবনায় মগ্ন তখনই তুষার অতি নিকটে এসে এক হাত দিয়ে তুশির চুলের মাঝে গলিয়ে দিলো, আরেক হাত কোমড় চেপে ধরেছে, তখন তুশি যেনো কয়েক ভোল্টেজের শকট খেলো, থমকে গেলো। কথা বলার ভাষা খনিকেই হারিয়ে ফেললো।
তুষার সেই সুযোগে তুশির ঠোঁট দুটো নিজের দখলে নিয়ে নিয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে রাখলেও তুষারের ছাড়ার নাম নেই।
এতক্ষণ তুশি লাফালাফি করলেও একসময় সেও শান্ত হয়ে যায়। দীর্ঘ হতে দীর্ঘ সময় পর তুষার যখন তুশির ঠোঁটে কামড় দিলো, তখন তুশি ব্যথায় কুঁকিয়ে উঠলো।
তখন তুশির চোখ দিয়ে অবরত পানি পড়ছে,আর সেই পানি তুষারের মুখে পড়লে তুশিকে আলতো করে দূরে সরিয়ে দেয়। তুশি ছাড়া পেয়ে তখন হেঁচকি তুলে কান্না শুরু করে দিলো।