“শেষের কবিতা” (Sesher Kobita) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস, যা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯২৯ সালে। এই উপন্যাসটি প্রেম, সম্পর্ক এবং জীবনের গভীর দার্শনিকতা নিয়ে রচিত। এটি অমিত রায় এবং লাবণ্যর প্রেমকাহিনীকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে।
অমিত রায় একজন বিলেত ফেরত বাঙালি যুবক, যার চরিত্রে মিশে আছে বিদ্রোহী মানসিকতা ও সাহসী ব্যক্তিত্ব। তার মধ্যে পশ্চিমি জীবনধারার আধুনিকতা এবং বাঙালি সংস্কৃতির এক মিশ্রণ দেখা যায়। অমিত রোমান্টিক, কবি, এবং ভাবুক। লাবণ্য একজন বুদ্ধিমতী, স্বাধীনচেতা মেয়ে, যার জীবনের দর্শন ও আদর্শ অমিতের থেকে ভিন্ন।
কাহিনীর শুরুতে অমিত এবং লাবণ্যর পরিচয় হয় শিলঙে। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের মধ্যে তাদের পরিচয় থেকে যে সম্পর্কের শুরু হয়, তা ধীরে ধীরে গভীর ভালোবাসায় পরিণত হয়। অমিতের সাথে লাবণ্যর এই সম্পর্কটি শুরু থেকেই একটি অন্তর্দ্বন্দ্বের মধ্যে দিয়ে এগোয়। অমিতের মনের গঠন এবং তার জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি তাকে একটি অস্থির এবং অস্থায়ী ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে। তার প্রেমের গভীরতা থাকলেও, সেই প্রেমে একধরনের অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা কাজ করে।
অন্যদিকে, লাবণ্যর চরিত্রটি এক ধরণের স্থিরতা এবং দৃঢ়তার প্রতীক। সে জীবনের প্রতি এক সহজ, সরল এবং প্রজ্ঞাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি রাখে। অমিতের প্রেমে লাবণ্য মুগ্ধ হলেও, সে জানে যে এই সম্পর্কটি স্থায়ী নয়। লাবণ্য তার আত্মমর্যাদা এবং আত্মসম্মানকে সর্বোপরি স্থান দেয়।
উপন্যাসটির মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথ এক গভীর দর্শনীয় প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন: প্রেম কি শুধুমাত্র আবেগের বিষয়, নাকি তা মন ও মস্তিষ্কের সমন্বয়ে গঠিত? অমিত এবং লাবণ্যর সম্পর্কের মাধ্যমে তিনি এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন।
“শেষের কবিতা” শুধু প্রেমের কাহিনী নয়, এটি জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে ভাবার একটি আয়োজন। অমিত এবং লাবণ্যর মধ্যে ঘটে যাওয়া কথোপকথনগুলি, তাদের চিন্তাভাবনা এবং দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের জীবন সম্পর্কে নতুনভাবে ভাবতে সাহায্য করে।
উপন্যাসের শেষে অমিত এবং লাবণ্যর সম্পর্ক এক নতুন মোড় নেয়। তারা বুঝতে পারে যে তাদের প্রেমে থাকা গভীরতা সত্ত্বেও, তাদের জীবনের পথ আলাদা। তারা একে অপরের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা রেখে নিজেদের জীবনকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে সিদ্ধান্ত নেয়।
“শেষের কবিতা” উপন্যাসটি রবীন্দ্রনাথের অন্যান্য রচনার মতোই ভাষার সৌন্দর্য এবং ভাবের গভীরতার জন্য প্রশংসিত হয়েছে। এটি বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য সৃষ্টি যা প্রেমের নতুন ব্যাখ্যা দিয়েছে এবং পাঠকদের মনের গভীরে স্থায়ীভাবে দাগ কেটে গেছে।