ভালবাসা এক আশার সঙ্গী – ভালবাসা এর গল্প

akhi akter

ভালবাসা এক আশার সঙ্গী – ভালবাসা এর গল্প

বর্ষাকাল, অনেক বৃষ্টি হছে, নীলক্ষেত থেকে পান্থপথ যাবো। বৃষ্টিতে প্রায় অনেকটা ভিজে গিয়েছি, মেজাজ তখন চরম বিগরে আছে; কি করব একটিও রিকশা পাচ্ছিনা।

“এই মামা; পান্থপথ যাবেন?”

অবশেষে একটি পেলাম তাও ১২০টাকা ছাড়া যেতে রাজি নয়। যেতে তো হবে, কারন ওপাশে আমার অশিন আমার জন্য অপেক্ষা করছে।

তাকে আমি আজ আমার হৃদয়ের কথা বলবো, তাই অনেকটা নার্ভাস ফিল করছিলাম।

অশিন আমার অনেক ভাল বন্ধু, সে এনএসইউ তে পড়ে। সে জানে না আমি তাকে তার অজান্তে অনেক ভালবেসে ফেলেছি।

ভালোবাসা কী সত্যিই আমি জানি না – রুমার কথা

ও আমার প্রতি অনেক কেয়ারিং ছিল, সব সময় আমার খেয়াল রাখতো, খোজ-খবর নিতো। আমার প্রতি তার এমন কেয়ারনেস আমাকে দুর্বল করে তাকে ভালবাসতে।

যাই হোক; অবশেষে আমি হাফ-এন-আওয়ার লেট করে তার সামনে হাজির হলাম। সে তো রেগে-মেগে অস্থির।

একগাদা ঝারি শুনতে শুনতে শপিং কমপ্লেক্স এর ভেতরে গেলাম। ওকে থামানোর জন্য দুটি প্রস্তাব রাখলাম;

“অশিন, তোমাকে আমি আজ অনেক ইম্পরট্যান্ট কথা বলবো, তার পূর্বে চলো আইসক্রিম খাই!”

ফুডকোর্টে বসে ওকে আমি আমার মনের অব্যক্ত ভালবাসার কথা জানিয়ে দিলাম। ক্ষণিকের জন্য সে নিস্তব্ধ হয়ে গেল।

কিছু বুঝতে পারছিলাম না কি হবে। আমি তাকে বললাম, অশিন আমি কি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি তোমাকে ভালবেসে?

সে কোন উত্তর দিলোনা, শুধু বললো; ফিজান আমি বাসায় যেতে চাই, তুমি কি আমাকে রেখে আসবে?

আমি বুঝতে পারলাম যে তাকে আমি আন-এক্সপেকটেড কিছু বলে ফেলেছি। আমি আর কিছু না বলে তার হাতটা ধরে হাটতে শুরু করলাম।

তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি -অনন্ত প্রেম – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বাহিরে এসে সিএনজি ডেকে বললাম, মামা মিরপুর যাবেন? হটাৎ সে পেছন থেকে বলে ওঠে, মিরপুর না মামা, উত্তরা যাবো; যাবেন?

এই কথা বলে সে উঠে পড়লো। আমি ঠিক কিছু বুঝে উঠতে পারলাম না। তার পাশে বসে পরলাম।

একটু হেজিটেশন নিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম; অশিন আমরা উত্তরা কেন? ইয়ে-মানে তুমি তো মিরপুরে…

সে চোখ বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো; উত্তরা পুলিশ অফিসে যাবো, তুমি আমাকে এতো লেট করে প্রপোজ কেন করলে, এতো দিন বলনি কেন? এই বলে সে হাসতে লাগলো।

আমি এতটা ভয় পেয়েছিলাম যে তখনো বুঝতে পারিনি যে সে আমাকে অ্যাপ্প্রুভ করেছে, সেও আমাকে অনেক ভালবাসে যতটা আমি তাকে।

ইছে করছিল তাকে জরিয়ে ধরে চিৎকার করে বলি, “আই লাভ ইউ” কিন্তু আমার নিয়তি আমাকে থামিয়ে দেয়।

এরপর থেকে শুরু হয়ে যায় আমার এক নতুন জীবন। প্রতিদিন দেখা করা, প্রতিরাতে জেগে জেগে ফোনে কথাবলা, আর প্রতি শুক্রবারে স্টার সিনেপ্লেক্সে মুভি দেখা।

আমাদের আরও সুন্দর সুন্দর গল্প ও কবিতা পড়তে এখানে ক্লিক করুন
যদি আমাদের সাথে শেয়ার করতে চান তো এখানে ক্লিক করুন

প্রায় ৮ মাস পার হয়ে যায়, এক সময় অশিন আমার জীবনের মুল লক্ষ্য হয়ে পড়ে, তাকে ছাড়া আমি আর যেন কিছু বুঝতাম না। ভালোই কাটছিল দিনগুলো।

২০১৮, নভেম্বরের শেষের দিকে একদিন অশিন আমাকে বলে লন্ডন থেকে তার খালা-খালু ফ্যামিলিসহ আসছে, প্রায় মাসখানেক থাকবে,

সে এসেছিল ,অমাবস্যার রাতে– পূর্ণিমার চাঁদ হয়ে – প্রেমের কবিতা—

তাই আমার সাথে সে প্রায় সময় কন্টাক্ট করতে পারবে না। বলতে গেলে এই একমাস কন্টাক্ট নাও হতে পারে। তার পরো আমরা মাঝে মাঝে মেসেজ এর মাধ্যমে একে অপরের খোজ নিতাম।

২১-১২-২০১৮, সকালে আমার সেলফোনের রিং বেজে উঠলে আমার ঘুম ভাঙ্গে। কল রিসিভ করতে ওপাশ থেকে বলে উঠে; “হ্যালো” ফিজান!

আমি আফ্রিনা বলছি (আফ্রিনা; অশিনের ও আমার অনেক ভাল ফ্রেন্ড)। তুমি কি আমার সাথে দেখা করতে পারবে? অনেক বড় সমস্য হয়ে গেছে, তোমাকে জানানো অনেক জরুরি।

তুমি আজ দুপুর ২টার পর ক্লাস শেষে বনানী বাজারে থেকো। আমি কিছু না বুঝে তাকে বললাম, ঠিক আছে; আমি থাকবো।

আফ্রিনার সাথে দেখা করলাম, সে বললো; তোমাকে কিছু কথা বলার আছে ফিজান। আমি সম্মতি দিলাম।

আফ্রিনা বললো; “ফিজান তুমি অশিন কে অনেক ভালোবাসো তাই না? কিন্তু তুমি কি জানো, তোমাকে ছাড়া সে আরো একটি ছেলের সাথে কমিটেড!! সে তোমাকে ধোঁকা দিচ্ছে ফিজান”

আফ্রিনার এই কথা যেন আমার বুকে সুঁচের মতো বিধলো। এর আগে আফ্রিনা আর কিছু বলে আমি তাকে বললাম;

‘দেখ আফ্রিনা; তুমি অশিনের অনেক ক্লোজ ফ্রেন্ড তাই আমি তোমাকে কিছু বলছি না, ভাল হবে তুমি এই মুহূর্তে এখান থেকে চলে যাও।

চলে যাওয়ার আগে সে বললো, ফিজান তোমাকে আমি একটা ই-মেইল করেছি যাতে কিছু ছবি আছে। আশা করি ওগুলি দেখে তোমার চোখ খুলবে” এই বলে সে চলে যায়।

আফ্রিনার কথা আমি ভাবলাম অশিন কে জানানো দরকার, তাই সেলফোন টা বের করে অশিন কে কল করলাম।

বেশ অনেকবার ট্রাই করি কিন্তু সে কেন জানি আমার কল রিসিভ করলো না। সে দিন বাসায় ফিরে আমি ঘুমিয়ে পড়ি; রাত ১০টার সময় আম্মু ডিনার করতে ডাকলে আমার ঘুম ভাঙ্গে।

সেলফোনটা হাতে নিয়ে দেখি ১টি মেসেজ, আমি ভাবলাম অশিন পাঠিয়েছে কারন সে দুপুরে আমার কল ধরতে পারেনি সে জন্য।

তুমি কি শুনবে …?? সেই রোমান্টিক কবিতা

কিন্তু ওপেন করে দেখলাম মেসেজটি আফ্রিনা পাঠিয়েছে। তাতে লেখা ছিল “সরি ফিজান, কিন্তু আমি তোমাকে যা বলেছি সব সত্যি, অশিন তোমাকে ধোঁকা দিচ্ছে।

আমি এ কথা তোমাকে না বললেও পারতাম কিন্তু আমি চাইনা তুমি কষ্ট পাও, তুমি অশিন কে যতটা ভালবাসো তার থেকে অনেক বেশি আমি তোমাকে ভালবাসি।

দুঃখ শুধু এই যে আমি আমার মনের কথা তোমাকে সঠিক সময় বলতে পারিনি।“ আমার মাথা যেন ঘুরে গেলো আফ্রিনার মেসেজ পড়ে।

সে সময় আমার সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে, আগামিকাল অপারেশন ম্যানেজমেন্ট পরীক্ষা; প্রিপারেসন কিছুই নেবার মত মন-মানসিকতা ছিল না।

পরদিন;২২ ডিসেম্বর, অনেক সকালে ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে ভারসিটির জন্য বের হই আমি, যাতে লাইব্রেরীতে গিয়ে প্রিপারেশন নিতেপারি।

সকালে মোটামুটি ফাকা রাস্তা, তারপরও জাহাঙ্গীর গেটে ছোট্ট একটা সিগনাল পরে যায়। আমি হটাৎ বাম দিকে তাকালাম,

দেখি এক ছেলে আর এক মেয়ে সিএনজিতে রোমান্স করছে, আমি খুব ইন্টারেস্ট নিয়ে দেখতে লাগলাম। এক সময় মেয়েটা সোজা হয়ে বসলো, আমি যখন মেয়েটার চেহারা দেখি;

আমার সমস্ত পৃথিবী যেন আঁধারে আচ্ছন্ন হয়ে পরে। সে কি সত্যি আমার অশিন না আমি ভুল দেখছি!! কি করব কিছু বুঝতে পারছিলাম না।

সিগনাল ছাড়লে তারা আমার সামনে থেকে চলে গেলো আর আমি সেখানেই বাইকে চুপচাপ বসে থাকলাম, ধিরে ধিরে সব কিছু যেন ঝাপসা হয়ে আসছিল আমার চোখে।

কোন রকম পরীক্ষা দিয়ে বাসায় ফিরে আফ্রিনার পাঠানো ইমেইল চেক করি, দেখতে পাই কিছু ছবি। বিশ্বাস হছিলনা অশিন আমার সাথে এমন কাজ করতে পারে।

আফ্রিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটি মেসেজ দিয়েছিলাম সে রাতে। অশিনের সাথে আর কথা হয়নি, সে অনেক বার আমাকে ফোন

দিয়েছিল কিন্তু আমার নিয়তি আমাকে বাধা দিয়েছে তার সাথে কথা বলতে ও কোন প্রকার সমাধানে আসতে। অশিন কে কিছু বলতেও পারিনি,

কারন মানুষ যাকে অনেক ভালবাসে তাকে কষ্ট দিতে পারেনা, কিভাবে কষ্ট দেয়া যায় তাও আমার জানা নেই।

এই ঘটনার প্রায় একমাস হতে চললো, জীবন টা যেন আমার বিমর্ষ হয়ে গেছে। শুধুমাত্র বাবা-মার মুখের দিকে তাকিয়ে বেঁচে আছি।

আমাকে নিয়ে তাদের অনেক স্বপ্ন, অনেক আদরের ছেলে তো আমি তাদের এই জন্য। কিন্তু তারা তো জানে না, তাদের লক্ষ্মী ছেলে আজ কতটা কষ্টে আছে।

“আমার ভাগ্য আমার সাথে অনেক মজা নিচ্ছে ……….!! “যে আমাকে অনেক ভালবাসে আমি তার ভালবাসার কোন মূল্যায়ন করলাম না,

আর আমি যাকে অনেক ভালবাসি, নিজের জীবনের থেকেও বেসি ভালবাসি সে আমার ভালবাসাকে মূল্যায়ন করলো না।“
পরিশেষে বলতে চাই।।

করিও না অবহেলা সেই মানুষটিকে
যে কিনা তোমায় সীমাহীন ভালবাসে।
ছুটিও না তাহার পিছে তোমার মূল্য নেই যাহার কাছে,
একদিন সে ছাড়িয়া যাইবে প্রয়োজন শেষ হইলে।

Leave a comment