তাজমহলের প্রেমকাহিনী – ভালোবাসার চিরন্তন সৌন্দর্য
রাত্রের শেষ প্রহর। ধরণী হতে আঁধার কাটেনি। আঁধারে ছেয়ে আছে চারিপাশ। অপারেশন থিয়েটারের বাহিরে ক্রমাগত পায়চারি করছে অর্ণব। আনায়ার বাড়ির লোক অর্ণবের বাড়ির লোক সবাই হসপিটালের করিডরে উপস্থিত। সবারই কম বেশি টেনশন হচ্ছে। অর্ণব টেনশনে মাত্রাতিরিক্ত ঘামছে। ওর হাত পা কেমন কাঁপছে। আনায়া যখন আর্তনাদ করে উঠেছিল তখন অর্ণবের ঘুম ভেঙ্গে যায়। অর্ণব লাফ দিয়ে উঠে বসে। ব্যাকুল কণ্ঠে জিজ্ঞেস করতে থাকি কি হয়েছে? আনায়া ব্যথায় চোখ মুখ খিঁচে রয়েছে। অর্ণব বার বার জিজ্ঞেস করেই যাচ্ছে। আনায়া পেটে হাত দিয়ে রেখেছে। অর্ণব মুহূর্তেই বুঝে গেল।
- ভালোবাসার মাঝে ছুটে আসা কোন অনুভুতি
- হুমায়ূন আহমেদ এর অডিও বুক মন ভালো করার উপায়
- প্রেম কিভাবে একটি অলৌকিক ঘটনা? প্রেমের সংকেত গল্প
- আকাশে রোদ উঠেছে হঠাৎ বসন্তের আগমন বসন্তের ছোঁয়া
- ফ্রিল্যান্সিং কি?কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবো?
“পেটে ব্যাথা করছে?”
আনায়া মাথা নেড়ে সম্মতি দিল। অর্ণব মুহূর্ত দেরি না করে কোলে তুলে নিল আনায়াকে। রুম থেকে বের হতে হতে অহনাকে ডাক দিলো। অহনা দৌড়ে বেরিয়ে এলো।
“আমি আনায়া কে নিয়ে হসপিটালে যাচ্ছি। তুই বাবা-মাকে জানিয়ে জলদি আয়”
অর্ণব আনায়াকে নিয়ে চলে এলো। পিছনের সিটে খুব সাবধানে বসিয়ে দিলো। অহনা এসে আনায়াকে ধরলো। অর্ণব গাড়ি ড্রাইভ করছে। ওর আজকে মনে হচ্ছে রাস্তা যেন শেষ হচ্ছে না। আনায়া ব্যথায় কাতরাচ্ছে। অর্ণব আনায়ার এই অবস্থা সহ্য করতে পারছে না। আনায়াকে সাহস দিচ্ছে। অহনা গাড়িতে বসে আবিরকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে। আনায়াকে হসপিটালে আনার সাথে সাথে ওকে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
আনায়া ব্যথায় আর্তনাদ করছে। অর্ণব বাহিরে দাঁড়িয়ে সেটা শুনতে পারছে। প্রিয়সীর আর্তনাদ সহ্য হচ্ছে না। মনে হচ্ছে বুকে কেউ ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করছে। অর্ণব সহ্য করতে না পেরে ওটির দরজার আঘাত করা শুরু করলো। নার্স দরজা খুলল কিছু বলার জন্য। তবে সামনে স্বয়ং এমপিকে দেখে কিছু বলল না। ধীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“এনি প্রবলেম স্যার”
“আমি ভিতরে যাবো। আমার বউ ভিতরে কষ্ট পাচ্ছে। আমি ওর কাছে যাবো। আমাকে ওর কাছে যেতে দিন”
“এখন তো ভিতরে আসা যাবে না স্যার। ডক্টরের বারণ আছে। নার্স আর ডক্টর ছাড়া কেউ ভিতরে এলাও না। আপনি একটু কষ্ট করে বাহিরে ওয়েট করুন”
অর্ণব উত্তেজিত স্বরে বলল,
“আপনার ডক্টরের বারণের গুষ্টি কিলাই। ভিতরে আমার বউ কষ্ট পাচ্ছে আর আমি বাহিরে বসে দেখবো। আপনাদের ডক্টরকে বলুন এমপি আশিয়ান সিকদার অর্ণব ভিতরে আসতে চাচ্ছে”
আবির এসে অর্ণবকে ধরলো। আবির অর্ণবকে শান্ত করার চেষ্টা করছে,
“দোস্ত এটা হসপিটাল বোঝার চেষ্টা কর”
“হসপিটাল তো কি হয়েছে? দেখছিস না ভিতরে আমার বউ কষ্ট পাচ্ছে। ওর কষ্ট আমি বাহিরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবো?”
আবির বলার মতো কিছু খুঁজে পেল না।নার্স চলে গেল ভিতরে। নার্স যেয়ে ডক্টরকে বলতেই ডক্টর অর্ণবের নাম শুনে ডক্টর অনুমুতি দিয়ে দিলো। অর্ণব ভিতরে ঢুকে দেখলো আনায়া ব্যথায় কাতরাচ্ছে। আনায়ার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। অর্ণবের চোখের কোণেও পানি চলে এলো। মুহূর্ত ব্যায় না করে আনায়ার কাছে চলে গেল। আনায়ার মাথা চেপে ধরলো বুকে। এক হাত দিয়ে শক্ত করে আনায়ার হাত আঁকড়ে ধরলো। আনায়া এতক্ষনের ভরসার মানুষ পেয়ে ঝরঝর করে কান্না করে দিলো। অর্ণব আনায়ার কান্না থামানোর চেষ্টা করছে। মাথায় চুমু এঁকে দিয়ে বলল,
“এভাবে ভেঙ্গে পড়লে হবে? তুমি না অর্ণব সিকদারের বউ? অর্ণব সিকদারের বউ যদি একটুতেই ভেঙ্গে পড়ে তাহলে হবে বলো? একটু কষ্ট সহ্য করো জান। আমাদের জুনিয়রকে পৃথিবীর আলো দেখাতে গেলে একটু তো কষ্ট সহ্য করতে হবে। কান্না করে না জান। তুমি তো জানো তোমার চোখের পানি আমাকে আঘাত করে। পীড়াদেয় বড্ড। মনে হয়ে বুকে কেউ ছুরি দিয়ে আঘাত করছে। আর কান্না করো না জান”
আনায়া তবুও ফুঁপিয়ে যাচ্ছে। অর্ণব ব্যর্থ চোখে তাকিয়ে আছে প্রিয়সীর মুখশ্রীর পানে। ওর যদি ক্ষমতা থাকতো তাহলে নিমিষেই প্রিয়সীর সকল কষ্ট কমিয়ে দিতো। অর্ণব আনায়াকে সাহস দিয়ে যাচ্ছে।
বাহিরে সবাই অপেক্ষা করছে। সবার মাঝে টেনশনের ছোঁয়া। আবির অপারেশন থিয়েটারের বাহিরে পায়চারি করছে। কিছুক্ষণ পর বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শোনা গেল। সবার মন থেকে কিছুটা পাথর নেমে গেল। নার্স একটা শুভ্র তোয়ালে পেঁচিয়ে নিয়ে এলো ফুটফুটে সুন্দর একটা বাচ্চা। অর্ণবের হাত কাঁপছে। কাঁপা কাঁপা হাতে বাচ্চাটা কোলে তুলে নিল। অর্ণবের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ল এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল। শুষ্ক ঠোঁট ছুঁয়ে দিলে বাচ্চার কপালে। মিনিমিনে স্বরে বলল,
“মাশাআল্লাহ। আমার ছেলে, আমার অস্তিত্ব”
অর্ণব এগিয়ে গিয়ে অচেতন আনায়ার কপালে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিল। ছেলেকে কোলে নিয়ে বাহিরে এলো। অর্ণবকে দেখে সবাই এগিয়ে এলো। সবাই জেঁকে ধরলো ওকে। আবির বাবুকে কোলে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“বনু কেমন আছে? ঠিক আছে তো?”
“আলহামদুলিল্লাহ, দুজনই ভালো আছে। একটু পর আনায়াকে কেবিনে শিফট করা হবে। তখন সবাই দেখা করতে পারবে”
সবাই এঁকে এঁকে বাবুকে কোলে নিচ্ছে। আদরে ভরিয়ে তুলছে। অর্ণব মুগদ্ধ চোখে ওর ছেলেকে দেখছে। ওর বুকে প্রশান্তির ছোঁয়া। অহনা বাবুকে কোলে নিয়ে আবিরের কাছে গেল। আবিরকে দেখিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“আমারও এমন একটা বাবু চাই”
আবির অহনার কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলো। নিজেও ফিসফিস করে বলল,
“আগে বিয়েটা তো হতে দাও। এরপর একটা কেন যতগুলো বাবু চাই ততগুলোই পাবে। তুমি রাজি থাকলে আমি ক্রিকেট টিম বানাতেও রাজি আছি”
অহনা চোখ রাঙিয়ে তাকালো আবিরের দিকে। আবির চুপসে গেল। কি মেয়ে বিয়ে করছে একটু কিছু বললেই এমন ভাবে চোখ রাঙায় মনে হয় চোখ দিয়েই ওকে ভস্স করে দিবে।
অর্ণব ছেলেকে কোলে তুলে নিল। ছেলের কানে আজান দিলো। আবির দিতে চেয়েছে কিন্তু অর্ণব দেয়নি। ওর ছেলের কানে ও আজান দিবে। অন্যকেউ কোনো দিবে? আনায়াকে কেবিনে শিফট করা হয়েছে। অর্ণব ছেলেকে কোলে নিয়ে বসে আছে। একবার আনায়ার দিকে তাকাচ্ছে তো একবার ছেলের দিকে তাকাচ্ছে। মিল খুঁজার চেষ্টা করছে। কিন্তু খুব একটা মিল পাচ্ছে না। নাকটা অনেকটা আনায়ার মতো লাগছে। কিন্তু অন্য কিছুর মিল খুঁজে পাচ্ছে না। আনায়া পিটপিট করে চোখ খুলল। অর্ণবের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“এমপি সাহেব আমার বাবু কোথায়?”
অর্ণব আনায়ার কাছে নিয়ে গেল বাবুকে।
“আমার কোলে দিন। আমিও কোলে নিতে চাই আমার বাচ্চাকে। আমার আর আপনার ভালোবাসার অস্তিত্বকে”
অর্ণব আনায়ার পাশে বাবুকে রাখলো।
“তুমি এখন অসুস্থ। ডক্টর বেশি নড়াচড়া করতে না করেছে। তাই এখন বাবুকে তোমার পাশেই দিলাম। একটু সুস্থ হও তখন কোলে নিও”
ছেলেকে দেখে আনায়ার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো। এ অশ্রু দুঃখের অশ্রু নয়, এ যে সুখের অশ্রু। আনায়া ছেলেকে দেখছে। হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিলো নিজের অস্তিত্বকে। অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বলল,
“এমপি সাহেব আমার ছেলের নাম কিন্তু আমি আমার নামের সাথে মিলিয়ে রাখবো”
অর্ণব ভ্রু কুঁচকে বলল,
“ছেলে কি তোমার একার? আমার ছেলের নাম আমি আমার সাথে মিলিয়ে রাখবো”
এক কথায় দুই কথায় দুজন ঝগড়া শুরু করে দিলো। বাচ্চাটা কি বুঝলো কে জানে? অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল আনায়ার মুখ পানে।
“দেখেছেন আমার ছেলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তাই ওর নাম আমার সাথে মিলিয়ে রাখবো”
“তোমার দিকে তাকিয়ে ভাবছে তার মা কি পরিমান ঝগড়ুটে। তার বাবার সাথে পা পা লাগিয়ে ঝগড়া করছে সেটাই দেখছে”
“মোটেও না। আমি একটুও ঝগড়াটে না। আপনি ঝগড়াটে”
“এখন তো সব দোষ আমারই হবে। যাও আমি তোমাকে ছাড় দিলাম। রাখো তুমি তোমার ছেলের নাম নিজের সাথে মিলিয়ে”
আনায়া খুশি হলো। ইশারায় অর্ণবকে কাছে ডাকল। অর্ণব এগিয়ে যেতেই ওর গালে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিল। অর্ণব গালে হাত দিয়ে বলল,
“এমন কিছু পেলে আমি ছাড় দিতে এক পায়ে রাজি”
আনায়া লজ্জায় রাঙা হয়ে গেল। এক বাচ্চার মা হয়ে গেল তবুও ওর লজ্জা কমলো না। অর্ণব মুগ্ধ চোখে প্রায়সীর লজ্জায় রাঙা মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। মায়াবতীর মায়ায় অর্ণব পুনরায় আবদ্ধ হলো।
কেটে গেছে ৪ বছর,
অর্ণবদের বাড়ি আজ নানান রঙে সেজেছে। চারপাশ জাঁকজমক পূর্ণ সাজে সজ্জিত। সবাই কাজে ব্যাস্ত। আনায়া সকল কাজ ফেলে খুঁজে চলেছে ওর দুস্টু ছেলেকে। সকাল থেকে কিছুই খায়নি। আনায়া অর্ণব কে দেখে জিজ্ঞেস করলো,
“এমপি সাহেব আপনার ছেলেকে দেখেছেন?”
“কোনো? কি হয়েছে? কি করেছে আমার ছেলে?”
“কি আবার করবে? সকাল থেকে খাওয়া দাওয়া নেই। এদিক ওদিক ছুটে চলেছে”
“দোষ করলেই আমার ছেলে, আর ভালো কিছু করলে তোমার ছেলে”
আনায়া কিছু বললো না। মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেল। অবশেষে ছেলেকে খুঁজে পেল অহনার ঘরে। অহনাকে সাজানো হচ্ছে ও অহনার কোলে বসে চোখ পাকিয়ে দেখছে। আনায়া ছেলের কাছে যেয়ে বলল,
“আব্বাজান আপনি এখানে? আর আপনাকে খুঁজে চলেছি আমি সারা বাড়ি। তা আপনার কি খাওয়া দাওয়া নেই?”
আনায়া অর্ণবের ছেলে “আয়ান সিকদার অর্ক”। মায়ের কথা শুনে অহনার গলা জড়িয়ে ধরল। অপরিপক্ক স্বরে বলল,
“মাম্মা দেখো মামনিকে কতো সুন্দর লাগছে। একদম বউ বউ লাগছে”
“মামনি তো আজকে বউই সেজেছে। কিছুক্ষন পর তোমার মামু এসে মামুনিকে নিয়ে যাবে”
অর্ক অহনার গলা আরেকটু জড়িয়ে ধরে বলল,
“উহু না। আমার মামনিকে আমি কথাও যেতে দিবো না। এমনকি মামুকেও দিবো না”
“মামু তো তাহলে কান্না করবে?”
“মামু কান্না করলে আমার চকলেট থেকে ওকে এটা চকলেট দিয়ে দিবো। তাও মামুনিকে দিবো না”
অর্কর কথা শুনে রুমে থাকা সবাই হেসে দিলো। আনায়া কিছু না বলে ছেলের জন্য খাবর আনতে চলে গেল। আনায়া ছেলেকে খাওয়াচ্ছে। অর্ক অহনার কোলে বসে বসে খাচ্ছে। আনায়া কতো করে বলল অহনার কোল থেকে নামতে। ছেলের এক কথা সে তার মামনিকে ছেড়ে কোথাও যাবে না।ও গেলে সেই ফাঁকে আবির এসে যদি ওর মামনিকে নিয়ে যায়। সেই জন্ন্য ও ওর মামনিকে ছেড়ে যাবে না। অহনাও বাঁধা দিলো। অর্ক খাওয়ার মাঝে প্রশ্ন করলো,
“মাম্মা আমার বউ কবে হবে? আমার বউও কি মামনির মতো লাল টুকটুকে বউ হবে?”
আনায়া ছেলের কথা শুনে হতবাক। এই টুকু ছেলে এরকম পাকা পাকা কথা বলছে ভাবা যায়। রুমে আবার হাসির রোল পড়ে গেল। আনায়া ছেলেকে ধমক দিয়ে বলল,
“চুপচাপ খাও। খাওয়ার সময় এতো কথা কিসের?”
অর্ক আর কোনো কথা বললো না। চুপচাপ খেতে লাগলো।
অতঃপর খুব জাঁকজমক পূর্ণ ভাবে অহনা আর আবিরের বিয়ে সম্পূর্ণ হলো। ওদের এতোদিনে ভালোবাসা পূর্ণতা পেল। অহনা আবির দুজনই অনেক খুশি। আশ্চর্য জনক বিষয় হলো অহনা যাওয়ার সময় একটুও কাদেনি। আবির ফিসফিস করে ওর কানে কানে বলল,
“একটু তো কান্না করো। লোকে কি বলবে?”
“এতো কষ্ট করে সেজেছি কি কান্না করার জন্য? কান্না করলে আমার সাজ নষ্ট হয়ে যাবে। আর লোকের কথা অহনা এক ফোটাও পাত্তা দেয় না”
অহনার বিদায়ের সময় অর্ককে সরিয়ে নিয়ে গেছে আনায়া। নাহলে অনেক কান্না করতো। অহনার বিদায় শেষে বাড়িটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা হয়ে গেছে। আত্মীয়রা বিকেলেই চলে গেছে। অর্ক রাতে মামনিকে খুঁজে না পেয়ে কান্না করা শুরু করছে। আনায়া অনেক কষ্টে ছেলেকে ঘুম পাড়ালো। ঘুম পাড়িয়ে এগিয়ে গেল ব্যালকনিতে। অর্ণব সেই কখন থেকে ব্যালকনিতে বসে আছে। একমাত্র বোনকে বিদায় দিয়ে ওর খারাপ লাগছে। সব সময় দুই ভাইবোন কতো খুনসুটি করতো। বাড়িটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে ওর কাছে। আনায়া অর্ণবের পিঠে হাত রাখতেই অর্ণব ঘুরে তাকালো। আনায়া জড়িয়ে ধরলো অর্ণবকে। পিঠে হাত রেখে সান্তনা দিয়ে বলল,
“মন খারাপ করবেন না এমপি সাহেব। সব মেয়েকেই একদিন বাবার বাড়ি ছেড়ে শশুর বাড়িতে যেতে হয়। এটা নিয়ম। তাই মেনে নিন, মন খারাপ করবে”
“হ্যাঁ সেটাই চেষ্টা করছি। অর্ক ঘুমিয়েছে?”
“ঘুমাতে চাইছিলো না। মামনির কাছে যেতে চাইছিলো। অনেক কষ্টে ঘুম পাড়িয়েছি”
অর্ণব কিছুক্ষন চুপ রইলো। দুজনের মাঝেই নীরবতা। বাতাসে আনায়ার গাঁয়ের মিষ্টি সুবাস অর্ণবের নাকে আসছে। অর্ণব কেমন ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছে। অর্ণব এগিয়ে এলো আনায়ার কাছে। অধর ছুঁইয়ে দিলো অধরে। আনায়াও আবেশে গ্রহণ করলো। অর্ণব কিছুক্ষন পর আনায়ার অধর ছেড়ে ওর গলায় নাক ঘষতে ঘষতে বলল,
“ছেলে আর কতদিন একা একা খেলবে বলো? চলে ছেলের জন্য খেলার সাথী আনার ব্যবস্থা করি”
অর্ণব এক ঝটকায় আনায়াকে কোলে তুলে নিল। আনায়া গলা জড়িয়ে ধরলো। অর্ণবের বাহুতে মুখ গুঁজে দিয়ে মিনিমিন করে বলল,
“অ*সভ্য পুরুষ”
অর্ণব হেসে দিলো। আনায়ার কপালে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিয়ে বলল,
“ভালোবাসি মায়াবতী”
“আমিও আপনাকে ভলোবাসি অ”সভ্য পুরুষ”
অর্ণব আনায়াকে কোলে নিয়ে এগিয়ে গেল বিছানার দিকে। আনায়াকে সাবধানে বিছানায় শুইয়ে দিলো। অর্ণব ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে আনায়ার দিকে। আনায়া লজ্জায় চোখ বুঝে ফেলল। অর্ণব আনায়ার কাজে হেসে দিলো। এখনো ওর মায়াবতী সেই আগের মতোই লাজুকই রয়ে গেল। কাছে গেলেই চোখ বুজে ফেলবে। অর্ণব আনায়ার চোখ বুঝার মাঝেও মুগদ্ধতা খুঁজে পায়। ওর মায়াবতীর মাঝে মায়া আর মুগদ্ধতার কোনো কমতি নেই। রাত যতো গভীর হচ্ছে অর্ণবের ভালোবাসা ততটা প্রখর হচ্ছে। আনায়া আবেশে গ্রহণ করেছে সেই ভালোবাসা। দুজনে ভেসে যাচ্ছে ভালোবাসার জোয়ারে। ভালোবাসার এক রঙিন দেশে। যেখানে নেই কোনো বাঁধা, রয়েছে এক আকাশ সমান ভলোবাসা।