সংসারের চোখ রাঙানি এড়িয়ে এ এক অদ্ভুত ভালোবাসা
সুরুপার বয়স সাতাশ, দেখতে বেশ ভালো, গায়ের রঙ ফর্সা। পারফেক্ট হাউস ওয়াইফ বলতে যা বোঝায় সুরুপা তাই। সুরুপার বিয়ে হয়েছে এই দুই বছর হল।
সুরুপার একটা ইচ্ছে আছে, চাকরি করার। কিন্তু তার শ্বশুরবাড়ির লোক বাড়ির বউয়ের চাকরি করাকে খুব একটা ভালো চোখে দেখেনা। এরকম রক্ষণশীল পরিবারে যে তার বিয়ে হবে সেটা কোনোদিনই ভাবেনি সে।
- ফ্রিল্যান্সিং কি?কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবো?
- ক্রাশ এর সাথে প্রেম
- অসম্পূর্ণ ভালোবাসা | ছোঁয়া লেগেছিল মাএ
- হুমায়ূন আহমেদ স্যারের এর কিছু মজার উক্তি
- সে এসেছিল ,হারিয়ে যেতে – তানিয়া ত্বোহা
স্কুল এবং কলেজ জীবনে হালকা হালকা কয়েকটা প্রেম মতো এলেও পুরোপুরি প্রেম করা হয়ে ওঠেনি তার। ইউনিভার্সিটি পাশ করতেই বিয়ে।
তারপরে সারাদিন শ্বশুরবাড়ির লোকের ফাইফরমাশ খাটা আর বরকে খুশি করা। এই গোলকধাঁধায় আটকে গেছে তার জীবন। এতো চোখ রাঙানি সত্ত্বেও সুরুপা এই গোলকধাঁধা থেকে বেরোতে চায়। সে চাকরি করতে চায়।
একদিন সুরুপার ফোনে ফোন এল কলেজের এক বান্ধবীর। অনেকদিন পরে বান্ধবীর ফোন পেয়ে সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল। বান্ধবি সুরুপাকে বলে যে কলেজে তাদের সাথে রুদ্র নামের যে ছেলেটা পড়তো, সে একটা স্টার্ট-আপ খুলেছে এবং সে সেখানে চাকরি করতে ঢুকেছে।
সেখানে একজন রিসেপ্সানিসট দরকার। সুরুপা যেহেতু দেখতে শুনতে ভালো এবং ইংরাজিটাও ভালো বলতে পারে তাই সুরুপাই এই চাকরির জন্য বেস্ট চয়েস। সুরুপা তো এক কথায় রাজি। তার অবস্থা খুশিতে পাগল হয়ে যাওয়ার মতো।
কিন্তু তার শ্বশুরবাড়ির লোককে সে কিকরে মানাবে! এই কথা বান্ধবীকে বলতে বান্ধবি বলে যে সে নিজে এসে সুরুপার বাড়ির লোককে মানাবে। কথামতো বান্ধবি সুরুপার শ্বশুরবাড়ি এসে কথা বলে শাশুড়ি এবং বরের সাথে।
প্রথমে রাজি না থাকলেও যেহেতু ওই বান্ধবি সবসময় সঙ্গে থাকবে সেই জন্য কোনোমতে রাজি হয়ে যায় সুরুপার বর ও শাশুড়ি। সুরুপা তো আনন্দে আকাশে উড়তে থাকে। কাল থেকে অফিস। কাল থেকে তার নতুন যাত্রা শুরু।
পরের দিন অফিস যায় সুরুপা। সবার সাথে আলাপ হয়। কোম্পানির মালিক, সুরুপার কলেজের বন্ধু রুদ্র তার সাথে আবার পরিচয় হল নতুন করে। রুদ্র খুব ভদ্র এবং অমায়িক একজন ছেলে। সুরুপার বয়সিই। যাই হোক, কাজ শুরু হল পুরো দমে।
সুরুপা রোজ অফিস যায়। সে মন দিয়ে কাজ করে অফিসে। টিফিনের সময় সবার সাথে গল্প আড্ডা হয়। রুদ্রর সাথেও কথা হয়। এক মাস কাটে। হাতে টাকা পেয়ে খুশি হয় সুরুপা। তার বর ও শ্বশুরবাড়ির বাকি লোকেরাও মাসে এক্সট্রা টাকা সংসারে আসতে খুশি হয়।
তার স্বাধীনতা বাড়ে। অফিসে কাজের চাপও বাড়ে। দেরি করে বাড়ি ফিরতে থাকে সে। কিন্তু এখন আর তার বাড়ির লোক তেমন কিছু বলে না।
ধিরে ধিরে রুদ্রর সাথেও ভাব জমতে থাকে। কলেজে সেরকম কথা হতনা দুজনের। কিন্তু এখন রুদ্রর সাথে কথা বলে সুরুপা বুঝতে পারে যে রুদ্রর মধ্যে এক সম্মোহনী শক্তি আছে এবং সে এও বুঝতে পারে যে ওই সম্মোহনী শক্তি সুরুপাকে গ্রাস করছে ধিরে ধিরে।
কিন্তু এটা কিকরে সম্ভব! সুরুপা যে বিবাহিত। বিবাহিত মেয়েদের কি প্রেমে পড়তে আছে নাকি? সুরুপা এসব ভাবে এবং তার মনের সাথে মাথার এক অদ্ভুত সংঘর্ষ চলতে থাকে। আজকাল যেন সুরুপা অফিস যায় শুধুমাত্র রুদ্রর জন্য, রুদ্রকে দেখবে বলে।
রুদ্রর কথা, রুদ্রর হাসি সবসময় সুরুপার চোখের সামনে ভাসতে থাকে। সারাদিন রুদ্রর কথাই ভাবতে থাকে সে। সংসারে, স্বামির প্রতি আর মন লাগে না তার। কিন্তু ও তো এতদিন জেনে এসেছে যে বিয়ের পর শুধু বরকেই ভালবাসতে হয়, বরকে খুশি করতে হয়। কিন্তু এটা কি নতুন জিনিস হচ্ছে তার সাথে!
একদিন সাহস করে বান্ধবীকে এই কথা জানায় সে। বান্ধবী বলে যে এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। বিশেষ করে অ্যারেঞ্জড ম্যারেজে এটা হয়। এটা শুনে স্বস্তি পায় সুরুপা। অফিস তাকে যেতেই হবে, স্বাধীনতার জন্য, টাকার জন্য, রুদ্রর জন্য, ভালোবাসার জন্য।