ব্যর্থ প্রেম – ভালোবাসা,একটি বাস্তব জীবনের গল্প
আজ আমি আপনাদেরকে একটা সত্যি ভালোবাসার গল্প শোনাবো যা অত্যন্ত দুঃখ ভরা । আমি একজনের জীবনের ব্যার্থ ভালোবাসার গল্প আপনাদের কাছে তুলে ধরলাম ।
আমার জীবনে প্রথম প্রেম এসেছিল ক্লাস এইট এ । তবে সে প্রেম ছিল কিছু সময়ের জন্য । ভালোবাসা কী সেটা বোঝার আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল সেই ভালোবাসা ।
প্রেম কার জীবনে কখন আসবে কেউ বলতে পারে না । আমার জীবন কাটছিল বন্ধুদের সাথে মজা করে আর পড়াশুনা করে । আমি পড়াশুনায় ভাল ছিলাম । আমার এক বান্ধবী ছিল যে পড়াশুনাতে আমার থেকেও ভালো ছিল ।
দুজনে একই সঙ্গেই বড় হয়েছি । একই সঙ্গে পড়তে যাওয়া , গল্প করা ইত্যাদি ।
- ফ্রিল্যান্সিং কি?কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবো?
- ক্রাশ এর সাথে প্রেম
- অসম্পূর্ণ ভালোবাসা | ছোঁয়া লেগেছিল মাএ
- হুমায়ূন আহমেদ স্যারের এর কিছু মজার উক্তি
- সে এসেছিল ,হারিয়ে যেতে – তানিয়া ত্বোহা
দেখতে দেখতে সময় ভালোই কাটছিল । আমরা ক্লাস নাইন এ ভালো রেজাল্ট করে ক্লাস টেন এ উঠলাম ।
আমার সব বন্ধুরা একসাথে বসতাম 3য়/ 4থ বেঞ্চে । ঐ বছর আমি আমার এক বন্ধুর ঘরে ইংলিশ পড়ার জন্য যাই একই টিচার এর কাছে । ওদের ওবস্থা খুব ভালো ছিল । ও ক্লাস নাইন থেকে ফোন ব্যবহার করত ।
আমি ক্লাস টেন এ উঠে সবে ফোন পেয়েছি Nokia c101 । ও আমার ঐ বান্ধবীকে ভালোবাসত , প্রোপোজ ও করেছিল ।
ওদের একে অপরের ঘরে যাতায়াত ছিল কারণ ওদের দুজনের বাবার মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব ছিল । একদিন ওদের বাড়িতে পড়তে গিয়ে দেখি স্যার আসেননি । আমি আর ও গল্প করছিলাম ।
কথায় কথায় ও আমাকে একটা ফোন নাম্বার দিয়ে বলল যে ” ঐ ফোন নাম্বার এ ফোন করে গালাগাল দিতে ” । আমি কার ফোন নাম্বার জিজ্ঞেস করতে বলল যে আমার ঐ বান্ধবীর ফোন নাম্বার ।
আমি জানতাম না যে ওরা একে অপরকে ফোন ও করত ।
একদিন ক্লাস করছি আমার এক বন্ধু ( তাকে আমরা লাভ গুরু বলতাম ) আমাকে বলল যে আমার দিকে একটা মেয়ে তাকিয়ে আছে । আমি তার দিকে তাকাতেই সে মুখ ঘুরিয়ে নিল । সে আর অন্য কেউ নয় আমার বান্ধবী ।
আমি ভেবেছিলাম ওর হয়ত কোন দরকার ছিল, কিন্ত না । এই ঘটনা প্রায়ই ঘটতে লাগল । আমার বন্ধুও এটা লক্ষ্য করেছিল , ও বলেছিল যে আমার বান্ধবী হয়ত আমাকে পছন্দ করে ।
আমি কথাটা হাসিতে উড়িয়ে দিয়েছিলাম কারণ ও ছিল আমার ভাল বান্ধবী । ও যদি কথাটা জানতে পারে হয়ত রাগ করবে ।
আসলে আমি ওকে আনেক ছোট থেকেই পছন্দ করতাম । তা ছাড়াও আমার একটা বন্ধু ওকে ভালোবাসত । ওরা একসাথে মাঝে মাঝেই গল্প করত । তাই ওসব কথা কোনদিনও ভাবিনি ।
একদিন পড়তে খুব বিরক্ত লাগছিল তাই কী করব ভাবছিলাম, হঠাত মনে পড়ল আমার বান্ধবীর ফোন নাম্বার তো আমার কাছে আছে ।
ফোন করব না sms করব সেটা ভাবছিলাম । অনেক ভাবার পর একটা sms করলাম, নাম বলিনি । অনেকক্ষণ পর sms এর একটা reply এল ।
তার পর sms চলতে লাগল । একদিন ও আমার নাম জিজ্ঞেস করেছিল । আমি আমার নাম বলিনি । শুধু বলেছিলাম আমার নাম s দিয়ে শুরু । তার পর কিছুদিন ঘন্টার পর ঘন্টা কথা হত sms এ ।
একদিন ক্লাস এ ওর এক বান্ধবী কে দিয়ে জিজ্ঞেস করাল যে আমি কী ওকে sms করি ? আমি বলেছিলাম না । এদিকে আমাদের sms এ কথাবলা চলতে থাকল ।
এইভাবে অনেক দিন কেটে গেছে । একদিন ঘরের বাইরে এসে ওকে ফোন করি , বাড়িতে সাবাই ঘুমিয়ে পড়েছিল ( তখন বাজে 10.00 pm / 11.00 pm ) । ফোন ধরল , ওদিক থেকে যখন উত্তর এল তখন আমি ভয়েতে ফোন রেখে দিলাম ।
আমি ভেবেছিলাম ওর দিদি হয়ত ফোন রিসিভ করেছে । ও ঘুরিয়ে ফোন করেছিল । অমি ফোন রিসিভ করি, ও আমার নাম জানতে চাইল । আমি অনেক পরে আমার নাম বলি । ও তখন বলেছিল ” তুই ? ” ।
আনেক কথা বলার পর আমি ওকে প্রোপোজ করেছিলাম । ও কোন উত্তর না দিয়ে , রাখছি বলে ফোন রেখে দিয়েছিল ।
পরদিন আমি খুব ভয়ে স্কুল গিয়েছিলাম । লজ্জায় আমি ওর দিকে তাকাই নি । দুদিন দুজনের কোন কথা হয়নি । তার পর আমি ওকে উত্তরটা জানতে চেয়েছিলাম । ও direct না বলে দিয়েছিল ।
আমি কারনটা জানতে চেয়েছিলাম, ও বলেছিল ” ওর একটা অসুখ আছে ” । আমি বলেছিলাম ” আমি তাও তোকে ভালোবাসি ” । ও আরও অনেক কারণ দেখিয়েছিল , তার পরেও আমার উত্তর ছিল ” আমি তবুও তোকে ভালোবাসি ” ।
তার কিছুদিন পর ও হ্যাঁ বলেছিল । সেদিন আমরা খুব কেঁদেছিলাম ।
এরপর আমাদের ভালোবাসার জীবন শুরু হল । এক সাথে গল্প করা , মাঝে মাঝে ঘুরতে যাওয়া । ওর পিসির বাড়ি গিয়ে গল্প করা ।
এভাবে বেশ ভাল ভাবেই কাটছিল সময় । আমাদের ব্যাপারে কিছু কিছু জানত যেমন ওর দিদি , পিসি ইত্যাদি ।
এক বিশেষ কারণে ওর বাবা আর আমাদের পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক ভাল ছিল না ।
কিন্ত ওর মা , দিদি আমার সাথে ভাল কথাবার্তা হত । আমার মা বাবাও ওর সাথে ভাল ভাবেই কথাবার্তা হত ।
কিন্ত দুজনের পরিবারের কেউ আমাদের ব্যাপারে জানত না শুধু ওর দিদি ছাড়া ।
দেখতে দেখতেই আমরা মাধ্যমিক পাস করলাম । কিন্ত ওর রেজাল্ট একটু খারাপ হল । আমি ওকে শান্তনা দিলাম ।
কিন্ত মনে মনেই আমি খুব কষ্ট পেলাম এই ভেবে যে এর জন্য একমাত্র আমিই দোষী । এরকম যেন আর না হয় তাই আমি ওর জীবন থেকে দূরে সরে যাব ভেবেছিলাম ।
কিন্ত পারিনি কারণ আমি ওকে খুব ভালোবেসে ফেলেছিলাম । দিন দিন ও পড়াশুনায় খারাপ হতে লাগল । এদিকে আমার কষ্টের বোঝা আরো বাড়তে লাগল ।
আমি ওর সাথে নানা কারণে ঝগড়া করতে লাগলাম , মাঝে মাঝে গালাগাল ও দিতাম । যাতে ও আমার উপর ঘৃণা করে ও আমার থেকে দূরে সরে যায় । যাতে ও মন দিয়ে পড়াশুনা করতে পারে ।
কিন্ত ও খুব কষ্ট পেত । আমি ওর কষ্ট সহ্য করতে পারতাম না । আমি ওকে খুব ভালোবাসতাম তাই ওর কাছে আবার ফিরে যেতাম ।
একদিন ও জানায় যে ওর বাবা নাকি আমাদের ব্যাপারে জানতে পেরেছে ।
এরপর ওকে নাকি নানান ভাবে মানসিক চাপ দিচ্ছে , ওর পড়াশুনার টাকাও নাকি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে । এটা শুনে আমার খুব খারাপ লাগল ।
আমার জন্য ওর জীবন নষ্ট হয়ে যাবে এটা আমি কোন দিনও চাইনা । ওর দিদি ওকে ওনেক ভাবে সাহায্য করেছিল ওই সময়ে । কিন্ত সারাজীবন তো ওকে সাহায্য করতে পারবে না ।
সামনে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা , এবার যদি ও খারাপ রেজাল্ট করে তাহলে ওর জীবন নষ্ট হয়ে যাবে ।
আর তার জন্য দয়ি হব একমাত্র আমিই । তাই আমি ঠিক করলাম ওর জীবন থেকে দূরে সরে যাব । এতে আমার খুব কষ্ট হবে ঠিকই কিন্ত ওর তো ভাল হবে ।
তবে সব ঠিক হয়ে গেলে ওর কাছে আবার ফিরে আসব ভেবেছিলাম । সামনে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা এখন যদি ওর থেকে দূরে সরে যাই ওর খুব খারাপ লাগবে তাতে ওর রেজাল্ট আরও খারাপ হবে ।
আর তাছাড়া এই সময় আমাকে ওর পাশে থাকা দরকার । এই ভেবে তখন আর কিছু বলা হয়নি ।
আমাদের আরও সুন্দর সুন্দর গল্প ও কবিতা পড়তে এখানে ক্লিক করুন
যদি আমাদের সাথে শেয়ার করতে চান তো এখানে ক্লিক করুন
দেখতে দেখতে আমাদের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা হয়ে গেল, রেজাল্টও বার হয়ে গেল । এবারও ওর রেজাল্ট খারাপ হল ।
এতে ওর বাবা আরও বকাবকি করতে লাগল । এরপর দুজনেই কলেজে ভর্তি হয়ে যাই । ও আমার থেকে অনেক দূরের একটা কলেজে ভর্তি হয় । দুরত্ব বেড়েছিল কিন্ত আমাদের ভালোবাসা কমেনি ।
আমি লক্ষ্য করলাম ও সেখানেও পড়াশুনা করছে না । তাই এবার সত্যি ওর থেকে দূরে সরে যাব ঠিক করলাম ।
একদিন ওকে উল্ট পাল্টা গালাগাল দি আর ওর উপর দোষ দিয়ে ওর সাথে break up করে নি । তবে সব ঠিক হয়ে গেলে ওর কাছে আবার ফিরে আসব ভেবেছিলাম ।
আমারা দুজন ওদিন খুব কেঁদেছিলাম । আর আমি কষ্ট সহ্য করতে না পেরে ওদিন খুব drinks করেছিলাম । কারণ আমি ওকে খুব ভালোবাসতাম । এরপর 2 দিন ও আমাকে অনেক sms আর ফোন করেছিল ।
আমি ওর নাম্বার Block করে দিয়েছিলাম , যাতে ও ঘৃণা করে । আর ও সত্যিই তা করেছিল ।
এক সপ্তাহ পর আমি ওর নাম্বার unblock করে দিয়েছিলাম । ও তার পর আর কোনদিন sms বা call কিছুই করেনি । আর আমি ও লজ্জায় sms বা call কিছুই করতে পারিনি ।
অনেক দিন পর আমি ওকে sms করেছিলাম , কিন্ত ও আমার নাম্বার চিনতেই পারেনি । আমি ভাবতেই পারিনি ও এতো সহজে আমাকে ও আমার ভালবাসাকে ভুলে যাবে । আমার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল ।
পরে শুনেছিলাম আমার break up এর পর ও একটা ছেলেকে প্রোপোজ করেছিল । ওরা এখন খুব সুখে আছে ।
আমি আর ওদের দুজনের মধ্যে কোন দিনও যাইনি । কারণ আমি শুনেছিলাম সার্থত্যাগই প্রকৃত ভালোবাসা । আর ও খুশি আছে এটাই আমার কাছে আনেক ।
ওর স্মৃতি আজও আমাকে কাঁদায়, হাসায় আর ভাবায় । আর আমার স্বপ্নগুল পূরণ করি ডাইরির পাতাতে ।
ওর নাম্বার আজও আমার ফোনে সেভ করা আছে । আমি আজও সময় পেলেই ওর Whatsapp আর Facebook এর profile চেক করে দেখি ।