লেখকঃ ইশরাক আবিদ
সুরা নাসর তিলাওয়াত করলে অন্তরে বিয়োগব্যথা অনুভুতি হয়। যে দিন থেকে জেনেছি যে এই সুরা ছিলো সর্বশেষ নাজিলকৃত সুরা এ সুরার নাজিলের পর আল্লাহর রাসুল (সাঃ) ইন্তিকাল করেন। সেদিন থেকেই সুরাটি তিলাওয়াত করলে আলাদা এক অনুভুতি হয়। আসুন সুরাটি সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু জেনে নিই:-
ইমাম আহমাদ (রাহিঃ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি বলেছেন, যখন
إِذا جاءَ نَصرُ اللَّهِ وَالفَتحُ
(যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়) এই সুরাটি নাজিল হয় তখন রাসুল (সাঃ) বললেন আমাকে আমার মৃত্যুর খবর জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আর ঐ বছর তিনি মৃত্যু বরণ করেন। (আহমাদ ১/২১৭)
বিভিন্ন রিওয়ায়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে সুরা নাসর নাজিলের তিন মাস কয়েকদিন পর রাসুল (সাঃ) ইন্তিকাল করেন।
রাসুল (সাঃ) ইন্তিকালের আগে বেশি বেশি ইস্তেগফার পাঠ করেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত যে এ সুরা নাজিল হওয়ার পর রাসুল (সাঃ) আখিরাতের জন্য এতো বেশি পরিশ্রম করতে লাগলেন যা ইতঃপূর্বে কখনো দেখা যায়নি।
সুরাটির মধ্যে আরো তিনটি শিক্ষার বিষয় রয়েছে।
আল্লাহ তায়ালার ওয়াদা বিজয় আসবে আর বিজয় আসলে দলে দলে লোকেরা ইসলাম গ্রহণ করবে এর পর আমাদের দায়িত্ব হলো আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করা।
নোট: যখন ছাত্র ভাইয়েরা কুফফার, গাদ্দারদের থেকে তাদের ভূমিকে রক্ষা করলো সেই মুহূর্তে বিজয়ের সাথে সাথে কি সুন্দর ভাবে সূরা নাসর তিলাওয়াত করলো। এটা দেখে ওয়াল্লাহি চোখে অশ্রু থেমে থাকে নাই, সে দিন এই বিজয় দেখে এর অর্থ না বুঝেই আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেনি এমন জানলে ওয়ালা, মানলে ওয়ালা কেউ ছিলো না। যেন খেলাফতের সূচনা শুরু হয়ে গেছে এর পর অর্থের দিকে লক্ষ করলেই বোঝা যায় আল্লাহ তায়ালা এই দ্বীন বিজয়ী ঘোষণা করেছেন। দ্বীন কিয়ামত পর্যন্ত বিজয়ী থাকবে। এই দ্বীন কে বিজয় করার জন্য একদল কে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামত পর্যন্ত রাখবে যারা শুধুই আল্লাহ রাহে যুদ্ধ করবে।]
সুরাটির অন্যতম শিক্ষা হলো কোনো কাজ করার পর সেটা তে বিজয়ী লাভ করা আসল সাফল্য নয়। সে কাজটি আল্লাহ তায়ালা যদি কবুল না করেন তাহলে এই কাজ করার পরও জীবন ব্যর্থ। কাজটি যতই যত্নে করা হোক না কেনো আমাদের চোখে তা নির্ভেজাল ধরা পড়লেও আল্লাহ চোখে তা প্রতিটি পদেই ভুল-ভ্রান্তি রয়েছে। এ সুরার আরেকটি শিক্ষা হলো মানুষ নিজের যোগ্যতা নিয়ে গর্ববোধ না করা। নিজের কাজের ব্যপারে কখনই নিজেই গর্ববোধ করা যাবে না। মানুষ যেটা যতই প্রশংসা করুক না কেনো নিজেকে ছোট করে দেখতে হবে। এই ধারণা থাকতে হবে যে এই কাজটি আল্লাহ তায়ালার বিশেষ অনুগ্রহ ছিলো। আল্লাহ তায়ালার কাছে সমস্ত প্রকার ভুল ভ্রান্তির জন্য বিনয়ের সাথে তার কাছে ক্ষমা চাওয়া। আর এই কাজটি রাসুল (সাঃ) বেশি বেশি করেছেন। তার মৃত্যুর আগে মক্কা বিজয়ের পর যেমন একটি সহিহ হাদিসে বর্ণনা হয়েছে ইমাম আহমাদ (রাহিঃ) মাশরুক (রাহিঃ) হতে বর্ণনা করেছেন আয়েশা (রাঃ) বলেছেন রাসুল (সাঃ) তার শেষ জীবনে নিম্নলিখিত কালেমাগুলো অধিক পরিমাণে পাঠ করতেন। দোয়াটি হলো:-
,سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِأَسْتَغفِرُ اللهَوَأَتُوبُ إِلَيْهِ
অর্থ: আল্লাহ মহাপবিত্র, তার জন্য সমস্ত প্রশংসা, আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তার নিকট তওবা করছি।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে প্রতিটি সুরাহ অর্থ জেনে বুঝে তিলাওয়াত করার তাওফিক দান করুন। (আমিন)
—–❍ ইশরাক আবিদ