বিশুদ্ধ ঈমান সিরিজ – চতুর্থ পর্ব।

বিশুদ্ধ ঈমান সিরিজ

Md Ishrak Abid

এক ইহুদী নারী একবার নবীজিকে দাওয়াত করে। সে একটি ভুনা বকরী পেশ করে, কিন্তু তাতে বিষ মিশিয়ে দেয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেটি থেকে আহার করেন এবং তাঁর সাথে থাকা কয়েকজন সাহাবিও আহার করেন। হঠাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে ওঠেন, ‘‘তোমরা তোমাদের হাত গুটিয়ে নাও। কারণ এটি (খাবারটির ধরণ) আমাকে অবহিত করেছে যে, এটি বিষযুক্ত।’’
.
(বিষক্রিয়ার ফলে) বিশ্‌র আল-আনসারী (রা.) মারা যান। নবীজি ইহুদী নারীকে ডেকে এনে প্রশ্ন করেন, ‘‘তুমি যা করলে, তা করতে কোন জিনিস তোমাকে প্ররোচিত করেছে?’’ সে বললো, ‘আপনি যদি সত্য নবী হয়ে থাকেন, তাহলে আমি যা করেছি তাতে আপনার ক্ষতি হবে না। আর যদি আপনি বাদশাহ হয়ে থাকেন, তাহলে আমি আপনার থেকে মানুষকে শান্তি দিতে চাইলাম।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ দিলে পরে তাকে হত্যা করা হয় (যেহেতু সে বিষযুক্ত খাবার দিয়ে একজনকে হত্যা করেছে)। অতঃপর নবীজি যে ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন, সে সম্পর্কে বলেন, ‘‘আমি সর্বদা সেই লোকমার ব্যথা অনুভব করছি, যা আমি খায়বারে (ইহুদি নারীর দাওয়াতে) খেয়েছিলাম। এই সময়ে তা আমার প্রধান ধমনি কেটে দিচ্ছে।’’ [আবু দাউদ: ৪৫১২, হাদিসটি হাসান সহিহ]
.
কিছু লোক দাবি করেন, নবীজি ইলমুম গায়েব তথা অদৃশ্যের খবর জানতেন! নাউযুবিল্লাহ্! যে গুণের অধিকারী কেবল আল্লাহ্, সেটিকে তারা নবীজির জন্য সাব্যস্ত করেন!
.
উপরের হাদিসটি থেকে আমরা কী শিখলাম? নবীজি গায়েব তথা অদৃশ্যের খবর জানতেন? তিনি যদি অদৃশ্যের খবর জানতেনই, তবে কেন নিজে এই বিষযুক্ত খাবার খেলেন আর কেন তাঁর সামনে একজন সাহাবি এই খাবার খেয়ে মারা গেলেন, তবুও তিনি কিছু বললেন না?
.
আচ্ছা, আরো স্পষ্ট দুটো আয়াত আমরা দেখে নেই। তাহলে আর কোনো সন্দেহের অবকাশ থাকবে না।
.
আল্লাহ্ বলেন, ‘‘(হে নবী) আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ সাধনের এবং অকল্যাণ সাধনের মালিক নই, কিন্তু যা আল্লাহ চান (তা ব্যতীত)। আর আমি যদি গায়বের কথা জেনে নিতে পারতাম, তাহলে কল্যাণের প্রাচুর্য পেয়ে যেতাম; আর কোনো অনিষ্ট আমাকে স্পর্শ করতো না।’’ [সূরা আল আ’রাফ, আয়াত: ১৮৮]
.
অন্যত্র আল্লাহ্ বলেন, ‘‘বলুন, আল্লাহ ব্যতীত নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে কেউ গায়েবের খবর জানে না এবং তারা জানে না যে, তারা কখন পুনরুজ্জীবিত হবে।’’ [সূরা আন নামল, আয়াত: ৬৫]
.
তারা কিছু অস্পষ্ট হাদিস এনে নিজেদের পক্ষে দলিল দিতে চায়। তাদের আমরা বলি, মূলত রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়েব তথা অদৃশ্যের তথ্য সেটুকুই জানতেন, যেটুকু তাঁকে জানানো হতো। আল্লাহ্ বলেন, ‘‘এবং তিনি নিজ ইচ্ছায় কিছু বলেন না, যতক্ষণ না তাঁর নিকট ওহি নাযিল হয়।’’ [সূরা আন-নাজম আয়াত: ৩-৪]
.
একটি দীর্ঘ হাদিসে মা আয়িশা (রা.) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি এরূপ বলে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর ওহি ব্যতীত কাল কি হবে তা জানাতে পারেন, সে-ও আল্লাহর উপর ভীষণ অপবাদ দিলো। কেননা আল্লাহ পাক বলেন, ‘বলুন, আসমান ও জমিনে আল্লাহ ছাড়া গায়েবসংক্রান্ত কোন কিছু কেউই জানে না’ [সহিহ মুসলিম: ৩৪৭]
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমরা আমাদের হৃদয়ের মণিকোঠায় রাখি। আমরা তাঁর সম্মানে জীবন উৎসর্গ করতেও দ্বিধা করি না। কিন্তু তাঁর শানে আমরা এমন কিছু বলি না, যা আল্লাহর কিতাবের সাথে সাংঘর্ষিক হয়। ‘নবীজি গায়েব জানেন’ এ ধরনের কুফরি আকিদা আমরা লালন করি না।
.
আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ, ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ।
.

Leave a comment